সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর শহরের সায়মা শাহজাহান একাডেমির উত্তর পার্শ্বে গড়ে ওঠেছে কেন্দুয়া সালমা ইসলাম প্রতিবন্ধী একাডেমী। এই একাডেমী প্রতিবন্ধী শিশু কিশোরদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে শিক্ষার আলো। নানান বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদেরকে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে নিয়েছে দৃপ্ত শপথ। ওই একাডেমীতে যেসব শিশু কিশোর ও কিশোরীরা ভর্তি হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই কোননা কোন ভাবে প্রতিবন্ধী। 

সমাজে আর ১০ জন শিশু কিশোর ও কিশোরীর চেয়ে একটু ব্যতিক্রম। প্রায় দেড়শ ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে গড়ে ওঠা কেন্দুয়া সালমা ইসলাম প্রতিবন্ধী একাডেমি ইতিমধ্যেই সমাজে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।
২০১৬ সালে ওই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন এক সংগ্রামী নারী। যিনি একেবারেই অজপাড়াগাঁ থেকে ওঠে এসে সমাজে বঞ্চিত অবহেলিত নির্যাতিত মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। তার নাম সালমা আক্তার। তিনি কেন্দুয়া উপজেলার ১১ নং চিরাং ইউনিয়ন পরিষদের দুইবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে উপজেলার প্রথম নারী চেয়ারম্যান।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন জানান, ২০১৬ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে সমাজসেবা কর্তৃক নিবন্ধন লাভ করে। যার নং: ম-০১০৯১। সমাজে যারা অনগ্রসর তাদেরকে এগিয়ে নিতেই সালমা আক্তার এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। তার অনুপ্রেরণায় আমরাও ১৫ জন শিক্ষক শিক্ষিকা ৩ বছর ধরে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি জানান, এ প্রতিষ্ঠানে মা ও শিশু শ্রেণিতে ৫০, শিশুতে ৪০, বৃত্তিমূলক ৩০, বিশেষ শিক্ষা ১৫ ও স্পেশাল ১৫ সহ ১৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে। এখানে যারা ভর্তি হয়েছে তাদের কারো মুখে ভাষা নেই, কারো নেই পা, নেই হাত, আবার কারো নেই দৃষ্টি শক্তি, আবার অনেকেই শ্রবণ প্রতিবন্ধী।

কেন্দুয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মো: বজলুর রহমান বলেন, নেত্রকোনা জেলা পরিষদের সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান-২ সালমা আক্তার এ পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি সহ যেসব সেবামূলক কাজ তিনি করেছেন এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কাজ কেন্দুয়া সালমা ইসলাম প্রতিবন্ধী একাডেমি স্থাপন করা। তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে আরো বড় দায়িত্ব পেলে সমাজ এগিয়ে যেতো। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বুধবার দুপুরে এই একাডেমির ৩ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সহ অন্যান্যদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ করা হয়।

উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহুল ইসলাম প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণকালে বলেন, যারা সমাজে অন্য ১০ টি শিশু কিশোর কিশোরীর চেয়ে অনগ্রসর তাদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা ও শিক্ষা দানের দায়িত্ব সমাজের সকলের।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইউনুস রহমান বলেন, সমাজে অনগ্রসর ও নানাভাবে বঞ্চিত শিশু কিশোর ও কিশোরীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কেন্দুয়া সালমা ইসলাম প্রতিবন্ধী একাডেমীতে আমি গিয়েছি। তাদের শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষক, শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি ভালো দেখেছি। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাব।

সালমা ইসলাম প্রতিবন্ধী একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সালমা আক্তার বলেন, নিজের প্রাপ্তির জন্য নয়, সমাজে বঞ্চিত ও অবহেলিত অনগ্রসর শিশু কিশোর এবং কিশোরীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতেই এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। এ প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ তার কণ্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের আন্তরিক সহযোগিতা দিতে বিনম্র অনুরোধ জানাই।

(এসবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৯)