নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী বাড়ির আঙ্গিনায় খোলা আকাশের নিচে খড়ের গাদার পাশে চলছে পাঠদান।

১০০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছিলেন ৪ জন শিক্ষক। একসাথে তিন শ্রেণির পাঠদান চলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ কারও কথা ঠিকভাবে শুনতে পারছিল না।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে নাগরপুর উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার অদূরে ধলেশ্বরী নদীর ভাঙ্গন কবলিত গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা মিলে এমন চিত্র। ২০১৭ সালের বন্যায় ধলেশ্বরী নদীর ভাঙ্গনে বিদ্যালয়ের ভবন ও এর খেলার মাঠ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে তখন থেকেই চলছে এ বিদ্যালয়ের বেহাল দশা। বিদ্যালয়ের ভবন ও কোন জায়গা না থাকায় অন্যের বাড়ির আঙ্গিনায় খড়ের গাদার পাশে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। কাঠ ফাটা রোদ, ভ্যাপসা গরম ও শীতের কনকনে হাওয়ায় পাঠদান ব্যাহত হয়। আর বৃষ্টি নামলে পাঠদান বন্ধ করে ছুটি দিতে বাধ্য হন শিক্ষকেরা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়টি নদী ভাঙ্গনের মুখে পড়ে। বেশ কয়েকবার বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হলেও গত ভাঙ্গনের পর আর বিদ্যালয়টি পুন:নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয়ের এ অবস্থার কারনে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে পড়ছে। দিনদিন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। এমনিতেই চরাঞ্চালের খেটে খাওয়া মানুষ পড়াশোনার চেয়ে কাজে বিশ্বাসী। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ অঞ্চলের শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরুপ প্রভাব পড়বে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আজম আলী জানান, বর্ষা মৌসুমের আগে যদি ভবন নির্মাণ না করা যায় তাহলে পাঠদান কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।

অভিভাবক মো.সুরুজ মিয়া বলেন, বিদ্যালয়টিসহ আমাদের বাড়ি-ঘর বারবার নদী ভাঙ্গনের মুখে পড়ায় আমরা খুবই বিপাকে পড়েছি। আমরা বাচ্চাদের যেমন খোলা আকাশের নিচে পড়ার জন্য পাঠাতে পারছিনা আবার না পড়িয়ে ঘরে বসিয়েও রাখতে পারছি না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি যত দ্রুত সম্ভব ভাঙ্গনের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে বিদ্যালয়ের জন্য একটি স্থায়ী ভবন নির্মাণ করা হোক।

এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শিপ্রা সরকার বলেন, আমি এই বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। বিদ্যালয়টি বারবার ভাঙ্গনের ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও দিনদিন কমে যাচ্ছে। বিদ্যালয়টি মেরামতের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেছি। আশা করছি খুব দ্রুত অস্থায়ী একটি ভবন নির্মান করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব করতে পারবো।

(আরএসআর/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৯)