আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : আগৈলঝাড়ায় যথাযথ কাগজপত্র না থাকা, নিয়ম অনুযায়ি চিকিৎসক, নার্স না থাকা ও অপচিকিৎসায় সম্প্রতি প্রসুতি মৃত্যুসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বুধবার ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া সেই দুঃস্থ মানবতার হাসপাতালে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বুধবার রাতেই আবার একাধিক রোগীর সিজারিয়ান অপারেশ করা হয়েছে। দুঃস্থ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমান আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সরকারী হাসাপাতালে রোগী রেফার না করে তাদের দুঃস্থ হাসপাতালেই চালিয়ে যাচ্ছেন রোগীদের চিকিৎসা প্রদান।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. একেএম মনিরুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য বৃহস্পতিবার তার অফিসের দেয়া নোটিশ গ্রহন করেছেন ওই হাসপাতালের পরিচালক ডা. হিরন্ময় হালদার।

ইউএনও’র নির্দেশে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. একেএম মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত হয়েছে তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন ডেন্টাল সার্জন ডা. মনন কুমার দে ও স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শুকলাল সিকদার।

তদন্ত কমিটি প্রধান ডা. একেএম মনিরুল ইসলাম জানান তাদের দেয়া কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তিন কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবেন তারা। ওই রিপোর্টের শুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন ইউএনও।

ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক হাসপাতাল বন্ধ ঘোষণার নির্দেশের পরে আবার তদন্ত কমিটি গঠন ও সরকারী চিঠি চালাচালির বিষয়টিকে খুব একটা ভালভাবে দেখছেন না স্থানীয় সচেতন লোকজন। নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট বিপুল চন্দ্র দাস অভিযানের সময় হাসপাতালে জনসমক্ষে বলেছিলেন, হাসপাতাল বন্ধ করা হলো, রোগী সরকারী হাসপাতালের প্রেরণ করা হোক। তাঁর ওই নির্দেশের পরে বুধবার রাতেই কিভাবে ওই হাসপাতালে সিজার করার মতো সাহস দেখায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের প্রশ্ন- দুঃস্থ মানবতার হাসপাতালের খুঁটির জোর কোথায় ? সাধারণ জনগন তদন্ত রিপোর্টে কি আসবে তা নিয়েও বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

প্রসংগত, ৩১ জানুয়ারি বাহাদুরপুর গ্রামে সূভাষ গাইনের বাড়িতে আশ্রিত পলি নামের এক রোগীর সিজারের সময় “এনেস্থাপিকফেইলর” এর কারণে মৃত্যুর খবর নজরে পরে স্থানীয় এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র। এমপি’র নির্দেশে ওই হাসপাতালে ৬জানুয়ারি ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস ওই হাসপাতালে অভিযান চালায়। অভিযানে বে-সরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার পরিচালনার মতো কোন বৈধ কাগজপত্র ও ১০ শয্যায় ওই হাসপাতালের জনবল কাঠামো দেখতে পায়নি আদালত।

ওই হাসপাতালে এর আগে এক রোগীকে এনস্থাশিয়া না দিয়ে হাত পা বেঁধে মুখে কসটেপ দিয়ে অপারেশন করা, প্রবাসীর স্ত্রী অন্য এক প্রসুতির রক্তের গ্রুপ ভুল নির্নয় করাসহ যে টেষ্ট তাদের ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে হয় না

এমন টেস্ট (এইচআইভি) না করেও মনগড়া রিপোর্ট দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বিপুল চন্দ্র দাস জানান, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তাদের হাসপাতালে রোগী রাখা ও অপারেশন করার খবর পেয়ে তিনি ওই হাসপাতালের পরিচালক ডা. হিরন্ময় হালদারকে আদালতের নির্দেশ পালন করতে কঠোরতা অবলম্বন করায় বুধবার বিকেল পাঁচটা থেকে অভিযুক্ত হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৯)