গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে ক্ষোভ, হতাশা, কষ্ট নিয়ে ময়মনসিংহের এক আওয়ামী লীগ নেত্রী ফেসবুক স্টাটাস দিয়েছেন ‘আমার ফাঁসি চাই’। এমন ফেসবুক স্টাটাস দিয়ে আলোচনার ঝড় তোলা নেত্রী হচ্ছেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নাজনীন আলম।

উপনির্বাচন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন তিনি। পরবর্তীতে সংরক্ষিত আসনে এমপি’র মনোনয়নপত্র জমা দেন। এবারও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি। আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনে মনোনীত ৪১জনের তালিকাও নেই তিনি।

এ প্রসঙ্গে নাজনীন আলমের সঙ্গে সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর স্বামী ফেরদৌস আলম ফোন রিসিভ করে জানান, তাঁর স্ত্রী নাজনীন আলম হাসপাতালে গেছেন। মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থকদের বারবার আশাহতের বিষয়টি তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

‘আমার ফাঁসি চাই’ মর্মে ফেসবুক মন্তব্য তাদেরই উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আপনারা জানেন আমার স্ত্রী ও আমি বঙ্গবন্ধু’র আদর্শের মানুষ। সাধারণ মানুষের সুখেদুঃখে মিশে আছি। দলের জন্য জীবনের যা অর্জন ছিলো সব দিয়ে দিয়েছি। এরপরও আমরা কী পেলাম?

বারবার মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় শনিবার রাত ৭টা ১১মিনিটের দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেন ‘আমার ফাঁসী চাই’। ফাঁসির কারণ হিসাবে ভুল ও অপরাধের ৯শর্তের বর্ণনাও দেন তিনি। নাজনীন আলম (ঘধুহরহ অষধস) এর ফেসবুকের মন্তব্য পাঠকদের জন্য হুবহুব তুলে ধরা হলো।

আমার ফাঁসি চাই..!

১) কেন হাই কমান্ডের আশ্বাসকে সরল মনে বিশ্বাস করেছিলাম!
২) এলাকাবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থাকার প্রয়োজন কেন অনুভব করেছিলাম!
৩) এমপি/সিনিয়র কোন নেতার পরিবারের সদস্য কেন আমি হলাম না!
৫) কেন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে একটি পয়সা রোজগারের ধান্ধা করিনি!
৬) কেন দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে দিনে দিনে নি:স্ব হতে গেলাম!
৭) কেন জনসমর্থন অর্জনের চেষ্টা করেছিলাম!
৮) কেন তদ্বীর/তেলবাজি ঠিকমত করতে পারলাম না!
৯) কেন সমর্থকদের বার বার কাঁদাচ্ছি!!
---সম্ভবত: এ সবই আমার ভুল/অপরাধ.. !

এজন্য আমার শাস্তি হওয়া উচিত।

১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম। সে নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হন। সে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির। স্বামী মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হন তার স্ত্রী নাজনীন আলম। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ- সম্পাদক। সেই থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হন নাজনীন আলম। ছুটে চলেন তৃণমূল মানুষের দ্বারপ্রান্তে। সেই নির্বাচনে নাজনীন আলমের হরিণ মার্কা পরাজিত হলেও নির্যাতন-নিপীড়নেও মাঠ ছাড়েননি। ‘হরিণ’ আখ্যায় নাজনীন সমর্থকদের অনেকেই হামলা-মামলার শিকার হন। জেলও কাটতে হয়েছে অনেককে।

তাঁতী লীগ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনসহ নানা সংগঠনের ব্যানারে রাজনীতির মাঠে সেই সময় থেকে সরব ছিলেন নাজনীন আলম। সমর্থক ও দলীয় অসচ্ছল, ত্যাগী নেতাকর্মীদের দু:সময়ে পাশেও দাঁড়ান তিনি। ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির প্রয়াত হওয়ার পর উপনির্বাচনেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীকের মনোনয়ন চান। সেবারও মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখির করেন তিনি। কিন্তু দলীয় নেতাকর্মী ও হাইকমান্ডের চাপের মুখে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তিনি।

(এসআইএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৯)