বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩৫/১ পোল্ডারের খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর মারকাজ মসজিদ থেকে কুমারখালী পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার বাঁধের দুই পাশে সৃজিত বনায়নের ক্ষতিপূরণ পায়নি রক্ষনাবেক্ষণকারী ১৩টি ইএস (ইম্ব্যাংমেন্ট শেল্টার) পরিবার।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো ) ও এবং ইম্ব্যাংমেন্ট শেল্টার (ইএস) পরিবারের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদী চুক্তিপত্র রয়েছে। তা সত্বেও বাঁধ উন্নয়নের সার্থে নির্ধারিত মেয়াদের আগে ছয় সহস্রাধি অপরিপক্ক গাছ কাটা হলেও তিন বছরেও তাদের সেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। ক্ষতিপূরণ না পাওয়া ওই পরিবারগুলো পাউবোর উর্ধ্বতন মহলসহ প্রশাসনের কাছে বার বার ধর্না দিয়েও কোনো ফল পাচ্ছেনা।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ইএস পরিবারের মধ্যে চুক্তিনামা সূত্রে জানা যায়, বাপাউবো ২০০২ সালের সৃজিত ওই বনায়ন ২৫ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি করে বাঁধের পাশে বসতি স্থাপনকারী ইএস পরিবারগুলোকে রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়। মেয়াদ শেষে গাছের সম্পূর্ণ মালিকানও পাবেন রক্ষনাবেক্ষনকারীরা। ওই মেয়াদে নিয়মিত বাঁধ রক্ষনাবেক্ষণ, বনায়ন তৈরী ও রক্ষনাবেক্ষণ করবে ইএস পরিবারগুলো। রক্ষনাবেক্ষণ কাজের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে প্রথম বছর নয় হাজার টাকা, দ্বিতীয় বছর আট হাজার, তৃতীয় বছর সাত হাজার এবং চতুর্থ বছর ছয় হাজার ৫০০ টাকা করে পারিতোষিক ভাতা হিসেবে দেওয়া হয় তাদের।

পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পাউবোর ৩৫/১ পোল্ডারে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানে কাজ শুরু হয়। ওই সময় কাজের সার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইএস পরিবারদের গাছ সরিয়ে নিতে বলে। বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালিন নির্বাহী প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার ২০১৭ সালের ৫জানুয়ারি ৩৮ (৫) নম্বর স্মারকের এক আদেশে ইএস পরিবার গাছের সম্পূর্ণ মালিকানা এবং শতভাগ সুবিধা ভোগ করবে বলে উল্লেখ করে তাদের গাছ সরিয়ে নিতে বলেন। এর পর পূর্ণ মেয়াদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রত্যেক পরিবাকে পরিচয় পত্র প্রদান করে সিইআইপ-১ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। অথচ গাছ সরিয়ে নেওয়ার তিন বছর অতিবাহিত হলেও প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ না পেয়ে হতাশায় পড়েছেন তারা।

ইএস পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মো. আঙ্গুর ফরাজী, সালেহা বেগম, আ. রউফ হাওলাদার জানান, রাজৈর মারকাজ মসজিদ থেকে কুমারখালী পর্যন্ত ৩৫/১ পোল্ডারের প্রায় ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধের দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা ২০০২ সালে রোপন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ওই গাছ রক্ষনাবেক্ষনের জন্য তাদের ১৩ পরিবারকে দায়িত্ব দেয়। ২৫বছর পর ওই গাছের মালিক তারা হবেন। ২০১৬ সালে বাঁধ উন্নয়নের জন্য কর্তৃপক্ষ তাদের গাছের পূর্ণাঙ্গ মেয়াদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বললে সেই অপরিপক্ক গাছ কেটে নেয় হয়। কিন্তু তারা ক্ষতিপূরণ না দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। ক্ষতিপূরণ চেয়ে তারা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করলেও কোনো লাভ হয়নি।

উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, কাজ শুরুর তিন মাস আগেই ইএস পরিবারকে তাদের গাছ সরিয়ে নিতে বলা হয়। ওই গাছ বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থের মালিকও তারা। তবে, বাগেরহাটের পাউবোর স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. আলতাফ হোসেসেন কাছে ইএস পরিবারের গাছের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

(এসএকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৯)