স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১১ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়ন বিতরণ শুরু ১৯ ফেব্রুয়ারি। চলবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মনোনয়ন ফরম জমা দিতে হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান।

সোমবার সকালে ঢাবির নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘নিজ নিজ হল থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে হবে এবং হলেই জমা দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ থেকে হলগুলোর নোটিশ বোর্ড এবং ডাকসুর ওয়েবসাইটে (ducsu.du.ac.bd) খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১৮ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটার তালিকার ভুলত্রুটি সংশোধনের আপত্তি গ্রহণ করা হবে। তালিকার বিষয়ে আপত্তি থাকলে তা লিখিতভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করতে হবে। ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটায় হলের নোটিশ বোর্ডে এবং ডাকসুর ওয়েবসাইটের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন বিতরণ করা হবে ১৯ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হলের প্রাধ্যক্ষের অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে হবে। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।

২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা থেকে হল সংসদের মনোনয়নপত্র হল রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক বাছাই করা হবে। ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টায় হলের নোটিশ বোর্ড এবং ডাকসুর ওয়েবসাইটে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রকাশিত তালিকার বিষয়ে কোনো প্রার্থীর আপত্তি থাকলে ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার মধ্যে হল সংসদ সভাপতির কাছে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে

২ মার্চ দুপুর ১টা পর্যন্ত লিখিত ও স্বাক্ষরকৃত আবেদনসহ হলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে যেকোনো প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারবেন। ৩ মার্চ বিকেল চারটায় প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা হলের নোটিশ বোর্ড এবং ডাকসুর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

৫ মার্চ দুপুর ১২টায় সম্পূরক ভোটার তালিকা হলের নোটিশ বোর্ড এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। ১১ মার্চ সকাল আটটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত একটানা ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলবে। ভোটাররা তাদের হলের ভোটকেন্দ্রে বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোট প্রদান করতে পারবেন। ভোটগ্রহণের পর ভোট গণনা শেষে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, ‘ঘোষিত গঠনতন্ত্র আচরণবিধি অনুযায়ী নির্বাচন কার্য পরিচালিত হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রয়োজনবোধে নির্বাচনের সময়সূচি পরিবর্তন করতে পারবেন।’

ঢাবির হল গঠনতন্ত্রের ৬ (বি) ও ৭ (এ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৫টি পদে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পদগুলো হচ্ছে সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক, সংস্কৃতি সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক, সমাজসেবা সম্পাদক এবং ১৩টি সদস্য পদ।

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যান্য রিটার্নিং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তিন দশক পর আদালতের নির্দেশে ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এরপর আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নি।

এর আগে ডাকসু নির্বাচন চেয়ে আদালতে রিট আবেদন হয়েছিল। গত বছর সেই রিট শুনানিতে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা আসে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনে ওই আদেশ স্থগিত করে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। আপিল বিভাগ গত ৬ জানুয়ারি সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিলে নির্বাচন আয়োজনের বাধা কাটে।

আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য ডাকসু ও হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে দৃশ্যমান বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কারা কারা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন তা ঘোষণা করা হয়েছে। যারা প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে অনার্স, মাস্টার্স, এমফিলে অধ্যয়নরত তারাই কেবল ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। এক্ষেত্রে কারও বয়স ৩০ বছরের ওপরে হলে তারা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন না।

এ ছাড়া সান্ধ্যকালীন বিভিন্ন কোর্স, প্রোগ্রাম, প্রফেশনাল এক্সিকিউটিভ, স্পেশাল মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, এমএড, পিএইচডি, ডিবিএ, ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স, সার্টিফিকেট কোর্স অথবা এ ধরনের কোর্সে অধ্যয়নরতরা ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। প্রত্যেক হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯)