চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : “ধীরে চলুন, সামনে ক্ষতিগ্রস্থ সেতু, ৫ টনের বেশি মালামাল বহন করা নিষেধ” লেখা সম্বলিত লাল রঙের সাইনবোর্ড  টাঙানো আছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার পাচঁটি সেতু সংলগ্ন সাইন বডের দিকে চোখঁ পড়লেই লেখাগুলো দেখা যায়। দামুড়হুদা উপজেলায় সেতু আছে সাতটি।

এর মধ্যে দামুড়হুদা উপজেলা সদরের মাথাভাঙ্গা নদীর উপর সেতু,গলাইদড়ি ষ্টিলের সেতু ও হেমায়েতপুর বরিক খালি খালের উপরের সেতু। এ তিনটি সেতু খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শতশত ভারীযানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকিপূর্ণ এ সকল সেতুর উপর দিয়ে। যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজী আলী আজগর টগর একই স্থানে ডবল লেনের সেতুসহ ফুটপথ নির্মানের প্রতিশ্রুতির তিন বছর পেরিয়ে গেলেও শুরু হচ্ছেনা সেতু নির্মানের কার্যক্রম। সেতুগুলো কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে চলাচলের উপযুগি করেন কৃর্তপক্ষ ।

দামুড়হুদা উপজেলার ঝুকিপূর্ণ সেতু গুলো হলে, দামুড়হুদা সদরের মাথাভাঙ্গা নদীর উপর সেতু ,রঘুনাথপুর রাইসা বিলের উপর সেতু ,কার্পাসডাঙ্গা ভৈরব নদীর উপর সেতু, বিষ্ণপুর গ্রামের সেতু ,মেমনগর গলায়দড়ি মাথাভাঙ্গা নদীর উপর সেতু, হেমায়েতপুর গ্রামের সেতু ও ভগিরথপুর মরাগাং নদীর উপর সেতু। মোট সাতটি সেতু ঝুকিপূর্ণ ।

ঝুঁকিপূর্ণ সেতু তিনটি হলো, দামুড়হুদা উপজেলা সদরের মাথাভাঙ্গা নদীর উপর নির্মিত সেতুর দুই পাশ্বের রেলিং কয়েক জায়গায় ভেঙ্গে রড বেরিয়ে যাওয়ার পর মেরামত করা হলেও ঝুকিপূর্ন চিহিৃত করা হয়েছে। এ সেতু উপর দিয়ে যেতে হয়ে চিৎলায় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইব্রাহিমপুর মেহেরুন শিশুপার্ক, শীবনগর ডিসি ইকোপার্ক, আটকবর নামক স্থানে রয়েছে আট শহীদের স্মৃতি স্তম্ভ কম্পপ্লেক্স ভবন এছাড়াও ঐতিহাসিক মুজিবনগর যে স্থান থেকে দেশ স্বাধীনতার ঘোষনা দেওয়া হয়েছিল ও অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়েছিল। এই এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সেতু এটি।

(দ্বিতীয় ঝুঁকিপূর্ণ সেতু) দর্শনা-মুজিবনগর সড়কে মাথাভাঙ্গা নদীর উপর নির্মিত গলাইদড়ি স্টীলের সেতুটি মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। বছর দেড়েক আগে পাটাতন ও নীচের গার্ডারের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়ায় কয়েকবার মেরামত করেও অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে পারপার হচ্ছে শত শত ছোটবড় যানবাহনসহ হাজার হাজার মানুষ। প্রশস্ততা কম হওয়ায় একটি বাস, ট্রাক বা অন্য কোন গাড়ী উঠলে অপরদিক থেকে আসা যানবাহনকে সামনের রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

বর্তমানে এটির উপর দিয়ে প্রতিদিন ৫-৬টি পরিবহন সংস্থার প্রায় অর্ধ শতাধিক ঢাকাগামী কোচ, আঞ্চলিক রুটের বাস, পণ্যাবহী ট্রাকসহ শত শত যানবাহন ও পথচারীরা চলাচল করে থাকে। যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ জেলার মানুষ বিভিন্ন যানবাহনযোগে এ সড়ক দিয়েই ঐতিহাসিক মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে যাতায়াত করে থাকে। বিশেষ করে ফ্রেবুুুয়ারী শুরু থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরিক্ষা শেষ হলে মুজিবনগরে পিকনিক অথবা শিক্ষাসফর করার জন্য প্রতিদিন কয়েক শত বিভিন্ন ধরনের যানবাহনযোগে হাজার হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করে থাকে। দর্শনা কেরু চিনিকলের মাড়াই মৌসুমে আখ বোঝায় শত শত পাওয়ারট্রলি, ট্রাক্টর ইত্যাদি যাতায়াত করে।

(তৃতীয় ঝুঁকিপূর্ণ সেতু) দীর্ঘদিনের পুরানো হোগলডাঙ্গা-ভগিরতপুর সড়কের হেমায়েতপুর বারিক খালি নামক স্থানের সেতুটি ও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সেতুটির ডান পাশের রেলিং এর ঢালাই নিচের অংশ ভেঙ্গে পড়ে রডের উপর দাড়িয়ে আছে । পাশের রেলিং উভয় মুখে ভেঙ্গে পড়েছে তাছাড়াও উপরের অংশে নানা খানাখন্দে ভরে গেছে। ঝুকিপূর্ণ এর উপর দিয়ে প্রতিদিন শতশত ভারী যানবাহনসহ সাধারন মানুষ চলাচল করে । এটিও যেকোন সময় ভেঙ্গেপড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো দ্রুত মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

দামুড়হুদা উপ-সহকারী প্রকৌশলী খালিদ হাসান জানান, দামুড়হুদা মাথাভাঙ্গা নদীর উপর নির্মিত সেতুটির স্থলে ফুটপথসহ ডবল লেনের সেতু নির্মানের সমস্ত কার্য্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে শুধুমাত্র উদ্বোধনের অপেক্ষায় পালা। তাছাড়াও প্রায় প্রতিটি সেতু চলাচলের উপযোগী করে মেরামত করেছি। নতুন করে সেতু নির্মাণের বরার্দ্দ আসলে দাপে দাপে তৈরি করার পরিকল্পনা আছে আমাদের ।

(টিটি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯)