গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিস চলে সপ্তাহে ৩দিন। বাকী দুই কর্মদিবসে অফিসের দরজা খোলা থাকলেও ফটকে থাকে তালা আর অফিস থাকে ফাঁকা। এটি দেশের কোন আইন না হলেও গৌরীপুরের সাবরেজিস্ট্রারের আইন। 

রবিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা পর্যন্ত গৌরীপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দেখা যায় ‘প্রধান ফটকে তালা, অফিস ফাঁকা’। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

সরজমিনে রবিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে গৌরীপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দেখা যায় অফিসের কলাপসিবল গেইটে তালা ঝুলছে। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া গেল খন্ডকালীন কর্মরত ঝাড়–দার মো. মামুন মিয়াকে। ফটকের ভিতরে প্রত্যেকটি চেয়ার ফাঁকা। শুধু অফিস নয়, পুরো সাবরেজিস্ট্রি এলাকাই ফাঁকা রয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে ৫দিন কর্মদিবস ও সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কর্মসময়। তবে অনুসন্ধানে জানা গেলো এ অফিস চলে দেশের প্রচলিত আইনে বাহিরে, সাবরেজিস্টারের নিয়মে। সপ্তাহের সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার; এ তিনদিন।

তবে চালু হওয়া এ রীতিকে অস্বীকার করে উপজেলা সাব-রেজিস্টার মো. নুরুল আমিন তালুকদার বলেন, আজ (রোববার) অসুস্থ্য তাই অফিসে আসতে পারেননি। তিনি ছুটিতে আছেন।

অফিস ফাঁকা-ফটকে তালা প্রসঙ্গে বলেন, অফিস সকাল ৯টায়। ৯টা ৩৭মিনিটেও কেন বন্ধ, তা তিনিও জানেন না।

সাবরেজিস্টার মো. নুরুল আমিন তালুকদারের ছুটির বিষয়টি জানেন না জেলা রেজিস্টার লুৎফুল কবীর। তিনি বলেন, তিনি অসুস্থ্য থাকতেই পারেন, তবে বিষয়টি আমি অবগত নই।

সপ্তাহে তিনদিন খোলা থাকে গৌরীপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিস এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আমার জানা ছিলো না। অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী ৫দিন খোলা থাকবে।

অপরদিকে সাব-রেজিস্ট্রার সপ্তাহে ৩দিন আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন অফিস সহকারী সাফিয়া খাতুনও। মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমি একটু অসুস্থ্য তাই দেরী হচ্ছে।

এদিকে সকাল ১০টা ১২মিনিট পর্যন্ত ঝাড়–দার ছাড়া কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেখা মিলেনি। সামনে চায়ের দোকানে সেরেস্তাদার খ্যাত প্রজাস্বত্ব আইন বিষয়ক মোহরা কর্মকর্তা সৈয়দ খায়রুল বাসারের সঙ্গে দেখা হয়। লুঙ্গিপড়া, হাতে ওষুধের বাক্স দেখিয়ে তিনিও বলেন, আমি অসুস্থ।

গৌরীপুর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল জলিল মুনশী ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফরও স্বীকার করেন সপ্তাহের সোম, মঙ্গল ও বুধবার আসেন সাব-রেজিস্ট্রার মো. নুরুল আমিন তালুকদার।

সপ্তাহে শুরু আর শেষদিন বন্ধ থাকে গৌরীপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিস। এতে জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। নির্ধারিত দিনে দলিল সম্পাদন না হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে সম্পর্কের অবনতিও ঘটছে। সৃষ্টি হচ্ছে ঝগড়া-বিবাদ ও বিশৃঙ্খলা।

এ প্রসঙ্গে সিধলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন বলেন, এতো দুর্নীতি আর অনিয়ম দেশের আর কোন অফিসে হয় বলে আমার জানা নেই।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিম বলেন, সরকারের নিয়মের বাহিরে কোন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী চলতে পারেন না। বিষয়টি আমারও জানা ছিলো না।

(এসআইএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯)