মানিক বৈরাগী


হাজার বছরের এই বাঙ্গালি জাতি লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আজ স্বাধিন ও স্বকিয়। তবে এ লড়াই সংগ্রাম আত্ম ঐতিহ্য সংরক্ষণ, লালন, পালন, সংযোজন, বিয়োজনের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাঙ্গালি, বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও বাংলাদেশ।

এ বাংলাদেশ সৃষ্টির সাথে রয়েছে যেমন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ,অতঃপর স্বাধীনতা, বিজয়।আবার অর্জিত বিজয় রক্ষায় ও কত কাটখড় পোহাতে হলো, হারাতে হলো বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে।এর পরের বিষয় গুলি আমাদের দেখাও জানা। কিন্তু আজকের মিলিনিয়াম প্রজন্ম তা দেখেনি। এই প্রজন্মের কাছে সেই সব আন্দোলন সংগ্রাম ও সংগ্রামে স্বদেশি শত্রু ও দালালদের চিহ্নিত করে যাওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব থেকে আজকের বিষয় টির অবতারণা। শফিক রেহমান, মফরহাদ মজহার, মাহমুদুর রহমান।

একদা এই তিন জনই স্বৈরাচার এরশাদের জৌলুশ পার্টনার। এরশাদের পতনের পর এরা ভিড়ে যায় বিএনপিতে।

আজকের এই দিনে (১৯৮৩) স্বৈরাচার এরশাদ কে প্রতিরোধ আন্দোলনে ঢাকার রাজপথে শহীদ হন জাফর, জয়নাল, দীপালি সাহা সহ অনেকেই। চট্রগ্রামে লালদিঘী র ময়দানে এরশাদ বাহিনীর ব্রাশফায়ারে শহীদ হন চট্রগ্রাম এমইএস কলেজের এক ছাত্রনেতা। প্রত্যেক শহীদ ছাত্রনেতারা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিউয়ন এর নেতা কর্মী, এর আগের দিন অর্থাৎ ১৩তারিখে শহীদ হন রাউফুন বসুনিয়া।

এই প্রতিরোধ দিবস কে আড়াল করতে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও যায়যায় দিন সাপ্তাহিকের মাধ্যমে ভালোবাসা দিবসের নামে একটি করে সংখ্যা ও টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্টানের আয়োজন করে শফিক রেহমান। এর মাধ্যেমে সে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা আন্দোলনের ইতিহাস আড়াল করতে ভালোবাসা দিবস নামক অপ সংস্কৃতির অপপ্রয়াসের অংশ মাত্র।

কবি ফরহাদ মজহার তৎকালিন সময়ে দ্বিমুখি, ত্রিমুখি অবস্থান।তার বাম রাজনীতির আড়ালে সে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন কে ভিন্ন হাতে প্রবাহিত করা, ও উবিনিগ এনজিওর আড়ালে সাম্র‍্যাজ্যবাদের দালালি করা।আর রাতে এরশাদের বক্তব্যের স্কিপ্ট লিখে দেয়া। মূলত এই ছিল সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার দালালিই ছিল তার কাজ। তিনি এরশাদের বক্তব্যের স্ক্রিপ্ট লিখে গণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার জাফর উল্লাহ কে দিতেন,আর এরশাদ কে দিতেন জাফর উল্লাহ। এসব সাবেক জাসদ ও সর্বহারা পার্টির দেউলিয়া বুদ্ধিজীবী র কাজ।

মাহমুদুর রহমান একজন ইঞ্জিনিয়ার আমলা। আমলা হিসাবে তার ককাজ হলো আমলাতন্ত্র কে নষ্ট করা,আর আমলাতন্ত্রের মধ্যে পাকিস্থান পন্থী আমলা তৈরি ও প্রমোট করা। এরশাদ ও তার অপরাধ জায়েজ করার ফন্দি ফিকির করা।

কালের আবর্তে এখন তারা বিএনপির নীতি নির্ধারক। ইসলামের ধ্বজাদারি। অথচ আজ এসব কুকর্ম ও অপরাধ নতুন প্রজন্ম জানেনা, তারাও গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসছে। তো আমরা যারা সচেতন অভিভাবক ও নব্বই এর ছাত্র আন্দোলনের কর্মী, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ ভালোবাসি আমাদের রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে আগামী প্রজন্ম কে এই ইতিহাস তুলে ধরা।

আপসোস লাগে নব্বইয়ের অনেকেই এই ইতিহাস কে ভুলে ভেলেন্টাইন পালনের আহবান করে।
বাঙ্গালীর ভালোবাসা দিবস হোক পহেলা ফাল্গুন।বসন্তের প্রথম দিন। আমার মাটির প্রাণের প্রকৃতির ভালোবাসা।

আর এই দিনে ভালোবেসে শহীদের চরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই পরম শ্রদ্ধায় ভালোবাসায়।সাম্রাজ্যবাদের অপকৌশল থেকে আমাদের বাঙ্গালিয়ানা, জাতিস্বত্বা, সামাজিক সংস্কৃতিক সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধ কে রক্ষা করি।
ভালোবেসে ফুল দি শহীদের চরণে।

লেখক :কবি, সাবেক ছাত্রনেতা।