বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের সুন্দরবন সন্নিহিত শরণখোলা উপজেলায় অবৈধ গড়ে উঠেছে ৩০টির অধিক ইট ভাটা। চলছে। এবস ইট ভাটায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সংরক্ষিত সুন্দরবনের নানা প্রজাতির কাঠসহ দেশীয় গাছপালা। সরকার ইটের ভাটার জ্বালানী হিসেবে কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ন নির্ষিদ্ধ করলেও স্থানীয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ করে’ চলছে রমরমা ইট ভাটার ব্যবসা। এত করে হুমকির মুখে পড়েছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সংরক্ষিত সুন্দরবনের প্রান-প্রকৃতিসহ স্থানীয় পবিবেশ।

সরকারের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রন অধ্যাদেশ ১৯৮৯ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও আবাসিক এলাকার ৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোন ধরনের ইটের ভাটা স্থাপন করার কোন নিয়ম নেই। এই আইন অমান্য করে পরিবেশ সংরক্ষন দপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা কোন ধরনের কাগজপত্র গ্রহণ ছাড়াই জনস্বাস্থ্য ও ফসলী জমির জন্য ক্ষতিকর এমন ৩০টির অধিক ইটের ভাটা শরণখোলা উপজেলায় নির্মান করে রমরমা ব্যবসা চালালে যাচ্ছেন এক শ্রেনীর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।

এই উপজেলার হোগলপাতি এলাকার মজিবর ফরাজী, কালীবাড়ি আমড়াগাছিয়া এলাকার লিটু হাওলাদার, ধানসাগর এলাকার হেলাল হাওলাদার, বকুলতলা এলাকার শামীম ফরাজী, সোনাতলা এলাকার বারী শরীফ, চালিতাবুনিয়া এলাকার জামাল হাওলাদার, আক্কাস হাওলাদার, মর্জিনা বেগম, আজিজ খলিফা, ছিদ্দিক মুন্সী, বগী এলাকার রিয়াদুল পঞ্চায়েতসহ অনেকে তাদেও ইট ভাটার জ্বালানী হিসেবে কাঠ ও ফসলী জমির মাটি ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব ইট ভাটায় ব্যবসায়ীরা ফসলি জমির মাটি কেটে ইট তৈরি করাসহ হাজার হাজার মন কাঠের বিশাল স্তুুপ করে রেখেছেন। তবে, এসব অবৈধ ইট ভাটা মালিকদের বক্তব্য জানতে তাদের সাথে কথা বলতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় জেনেই মোবাইল ফোন কেটে দেন।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালীরা উপজেলা প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের ‘মাসহারা’ নিয়ে অলিখিত অনুমতি দিয়েছেন। যার ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের খেয়াল-খুশি মতো আবাসিক ঘনবসতিপূর্ন এলাকা, স্কুল, কলেজ ও মসজিদ সংলগ্ন এলাকার আশে পাশের ফসলী জমিতে ইটের ভাটা স্থাপন করে ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন। ওই সকল ইট ভাটায় দেদার পুড়ছে সংরক্ষিত সুন্দরবনের নানা প্রজাতির কাঠসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলজ ও ঔষুধি গাছ। ইট পোড়ানোর কালো ধোয়ায় সব থেকে বেশী পরিবেশ দূষনের মুখে পড়েছে ওয়ার্ল্ড ঞ্যারিটেজ সাইড সংরক্ষিত সুন্দরবন।

ইট ভাটার আশে-পাশের বহু গাছপালা শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তার দূষনে পড়ছে স্থানীয় লোকজন। ইট পোড়ানো বিষাক্ত কালো ধোঁয়া এবং আগুনের তাপে ধীরে ধীরে ধ্বংসের মুখে পড়ছে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর সবুজ বনজ সম্পদ এবং মাতৃত্ব হারাচ্ছে নানা প্রজাতির ফলজ গাছ। যার ফলে মাটির উর্ভরতা দিন দিন হ্রাস পাওয়ার আশংকা কৃষিবিদদের। শ্বাস কষ্টজনিত রোগে শিশুসহ বয়স্ক ব্যক্তিদের আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পাড়েছে উপকুলীয় স্বাস্থ্যসেবা।

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার আইনজীবী এ্যাডভোকেট সাইদ আহম্মেদ কবির বলেন, ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রন আইন অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রসাশকের কার্যালয়ের অনুমোতি ছাড়া কেউ ইট-ভাটা করতে পারবেন না। ইট ভাটায় ফসলী জমির মাটি ও জ্বালানী হিসাবে কাঠ ব্যবহার করা যাবে না। যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকায় অবৈধ উপায়ে ইট ভাটার করছেন তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার বলেন, ইট ভাটার কারনে প্রতি বছর উপজেলার অনেক ফসলি জমি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ভাটা স্থাপন করা জমিতে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

বাগেরহাট পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এমদাদুল হক বলেন, শরণখোলা উপজেলায় ইটের ভাটার বিষয়টি তারা জানেন না। তবে অচিরেই অভিযান পরিচালনা করবেন। এছাড়া ভবিষ্যতে যাতে কেউ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কর্মকান্ড করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস বলেন, ইট পোড়ানোর জন্য কোন অনুমতি উপজেলার কাউকে দেয়া হয়নি। তবে কোথায় পোড়ানো হচ্ছে তা জানতে পারলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এসএকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯)