স্পোর্টস ডেস্ক : ছোট ছোট পাসে অনেকটা সাম্বার তালে তালে পায়ের অসাধারণসব কারিকুরি দিয়ে প্রতিপক্ষকে বোকা বানানো-ব্রাজিলের ফুটবল খেলার ধরণটাই এমন ছিল।ইংলিশরা জন্ম দিলেও এ ছন্দেই ফুটবল খেলাটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল ব্রাজিলিয়ানরা।


আর এ পথে তারা সাফল্যও পেয়েছে অনেক। ১৯৫০ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বিশ্বকাপ আসরের চারটির ফাইনালেই দেখা গেছে সেলেসাওদেরকে।এর মধ্যে আবার তিনটির শিরোপা জিতে ফিফার জুলে রিমে ট্রফিটা নিজেদের সম্পত্তি নেয় তারা। তবে এরপর বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের জন্য দুই যুগ অপেক্ষা করতে হয়েছে ব্রাজিলকে।শৈল্পিক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে আর চূড়ান্ত সফলতা পাচ্ছিলোনা পেলের উত্তরসূরিরা। সক্রেটিস,জিকো,ফ্যালকাও ও কারেকার মত ফুটবলের সর্বকালের সেরারাও ৮২ ও ৮৬তে দেশকে আরেকটি বিশ্বকাপ ট্রফি এনে ব্যর্থ হন।মূলত এরপর থেকেই বদলে যেতে শুরু করে ব্রাজিলেরর খেলার ধরণ।

এক্ষেত্রে ১৯৮২ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে ইতালির বিপক্ষে জিকোদের হারকেই টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করা হয়।সুন্দর খেলে হারার চেয়ে বাজে খেলে জয় পাওয়াটাই ভাল-এমন নীতি মেনে চলতে শুরু করেন ব্রজিল কোচরা।আর তাতে সুন্দর ফুটবলেরর পূজারীরা হতাশ হলেও সাফ্য কিন্তু ধরা দিয়েছে ঠিকই।১৯৯৪ সালে কার্লোস আলবার্তো পেরেইরার পর ২০০২ সালে লুইজ ফিলিপে স্কলারি সেলেসাওদের এনে দেন বিশ্বকাপ।৯৮ সালে মারিও জাগালোও চূড়ান্ত সাফল্যের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন।এরই ধারাবাহিকতায় ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন সিবিএফ ২০১২ আবার স্কলারির হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দেয়।তবে অফফর্ম ফুটবলারদের ওপর ভরসা রাখার মাশুল ২০১৪ বিশ্বকাপে দিতে হয়েছে স্কলারিকে।জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হেরে সেমিতেই শেষ হয়ে গেছে নেইমারদের হেক্সা মিশন।তাতে আবার কোচ বরখাস্ত করেছে।এরই মধ্যে অবশ্য স্কলারির উত্তরসূরি নির্বাচন করে ফেলেছেন সিবিএফ কর্তারা।সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজই দ্বিতীয় দফায় সেলেসাওদের দায়িত্ব নিতে চলেছেন কার্লোস দুঙ্গা।সুন্দর ফুটবলের পুজারীদের জন্য এটা বড় হতাশার খবরই বটে।কারণ সুন্দর ফুটবল নয় জয়কে প্রধান্য দিয়ে কৌশল সাজান দুঙ্গা।আগের দফায় ১৯৯৪ বিশ্বকাপ জয়ী এ অধিনায়কের অধীনে ব্রাজিল নিয়মিত জয় পেয়েছিল।দুঙ্গার নতুন মেয়াদেও হয়ত তেমনটি ঘটবে।তবে শৈল্পিক ফুটবলের ভক্তদের মনের খোরাক কতটা মেটাতে পারবেন দুঙ্গা সেটা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

পেশাদারি ফুটবলে কোচিংয়ের বড় কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই ২০০৬ সালে ব্রাজিলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন দুঙ্গা।২০১০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত প্রায় চার বছর সে দায়িত্ব বেশ ভালভাবেই পালন করেছিলেন তিনি। তার অধীনে লুসিওরার ৬০ ম্যাচ খেলে ৪২ জয়ের বিপরীতে মাত্র ৬ বার হেরেছিল।এর মধ্যে আবার ব্রাজিলিয়ানদেরকে ২০০৭ সালে কোপা আমেরিকা ও ২০০৯ কনফেডারেশনস কাপ শিরোপা এনে দিয়েছিলেন দুঙ্গা।তবে ২০১০ বিশ্বকাপের দল ঘোষণার পর থেকেই আরোও বেশি সমালোচিত হতে থাকেন এ কোচ।পুরো ৯০ মিনিট বুক চিতিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ রাখাতে পারাটাকেই বড় করে দেখতেন দুঙ্গা।আর তাই রোনালদিনিহো,পাতো নেইমারদের মত ফুটবলাররা জায়গা না পেলেও দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের ব্রাজিল স্কোয়াডে টিকে গিয়েছিলেন গ্রাফিতে,মেলোদের মত কিছু এভরেজ ফুটবলার।অবশ্য সিদ্ধান্তটা যে ভুল ছিল তার প্রমাণও খুব দ্রুই পেয়েছেন দুঙ্গা।নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের চাপ সামলানোর ম্যাচে লিড নিয়েও ব্রাজিল হেরে যায় ২-১ গোলে।আর সে কারণেই চাকরি হারাতে হয়েছিল এ ব্রাজিলিয়ানকে।


(ওএস/এটিঅার/জুলাই ২২, ২০১৪)