উত্তম গোলদার, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) : পিতার হাত থেকে মজার খাবার নেয়া হলো না সাকিবের। পিতার নিথর দেহ বাড়িতে ফিরলেও খাবার না পাওয়ার কাদঁছে পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশুটি। পিতার মৃত্যু নাকি ঘুমিয়ে আছে কিছু অনুভব করতে পারছে না। 

গত তিনদিন ধরে আশায় বুক বেধেঁ আছে শাকিব। আগুনে পুড়ের নিহত হওয়ার আগেরদিন রাতে মুঠোফোনে মজিবর ৫ বছরের ছোট শিশু সাকিবকে বলেন,বাবা আমি বাড়িতে আসতেছি কয়েকদিনের মধ্যে। তোমার জন্য মজা নিয়ে আসবো। শুক্রবার সকালে শ্রমিক মুজিবরের নিথরদেহ নিয়ে আসলেও ছোট ছেলে সাকিবের প্রিয় মজার খাবারটি বাবার হাত থেকে আার নেয়া হয়নি।

পিতার মৃতদেহ দেখে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের বুকভাটা কান্নার কারন বুঝতে না পারলেও বাবার খাঁটিয়ার পাশে দাড়িয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে সবার দিকে তাকিয়ে বাবাকেই খুঁজেছেন সাকিব। এদৃশ্য দেখে উপস্থিত আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরাসহ সংবাদকর্মীরাও চোখের অশ্রু সংবরন করতে পারেনি। ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকান্ডে প্লাষ্টিক কারখানার শ্রমিক মুজিবর হাওলাদারের মুত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামের মোসলেম হাওলাদারের পুত্র মোঃ মুজিবর রহমান।

মুজিবরের স্ত্রী মাসুমা বেগম বলেন, ঢাকায় চকবাজার এলাকায় একটি প্লাষ্টিক কারখানার আমার স্বামী’র আয়ের টাকায় আমাদের সংসার ও ছেলে মেয়েদের পড়াশুনু চলতো। অনেক বছর ঢাকায় চাকরী করার পরে ছোট্ট পরিসরে গ্রামের বাড়িতে একটি ঘর তুলেছেন একটু সুখের আশায়। মাস দুইয়েক আগে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এই সুখ তাঁর কপালে সইলো না। তাঁর একটু একটু করে জমানো সুখগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর সাথে আমাদের কপাল থেকে সুখ হারিয়ে গেছে। ছেলে-মেয়েরা আর তাদের বাবাকে দেখতে পারবো না। ছোট্ট্র শিশুটি আজও মজার খাবার পাবার আশায় বাবাকেই ডাকছে। তাই অগ্নিকান্ডে নিহত শ্রমিক মুজিবরের স্ত্রী সরকারের কাছে সাহায্যে কামনা করেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামটি পায়রা নদী তীরবর্তী হওয়ায় এই গ্রামের অনেকেই জীবিকা নির্বাহের জন্য ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কাজ করছেন। সংসারের ৭ সদ্যেরে মধ্যে একমাত্র তিনি ছিলেন উপার্জনকারী ব্যাক্তি এবং পিতার পাশাপাশি মেঝো ছেলে সংসারের সুখের আশায় পিতার সাথে ঢাকা চকবাজারে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন। দীর্ঘ পঁচিশ বছর যাবৎ ঢাকার চকবাজারে প্লাষ্টিকের কারখানায় ট্রলির শ্রমিকের কাজ করে কোন মতে সংসার চালাতেন।

পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে সুমন হাওলাদার(২০) বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঘুনাপুর আবদুল মালেক ডিগ্রী কলেজের ডিগ্রী ২য় বর্ষের ছাত্র ও মেয়ে ডালিমা আক্তার রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী। তিন মাস আগে বড় মেয়ে মাকসুদাকে বিয়ে দেন ধার-দেনা করে। বিয়ের তিনমাস পরে ধারে টাকা পরিশোধ করা কথা থাকলেও দেনার টাকা নিয়ে বাড়িতে ফেরা হলো না মুজিবরের। তাঁর স্বপ্নগুলো চকবাজারে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি ঠিকই আসছেন,কিন্তু লাশ হয়ে।

একই কারখানায় নিহত মুজিবরের সহকর্মী আহত মোঃ আলম হাওলাদার(৩৫) বলেন, ওইদিন রাতে মজিবরসহ ৯ জন শ্রমিক একসাথে ট্রলি থেকে প্লাষ্টিক তৈরীর কাঁচামাল আনলোড করছিলাম। এসময়ে বিকট শব্দ শুনি ও আগুন দেখতে পেয়ে উপস্থিত সবাই শ্রমিকরা ছুটাছুটি করতে থাকি।

এরমধ্যে ৬ জন শ্রমিক নিরাপদে আসতে পারলেও আমার চাচা মজিবর হাওলাদারসহ বাকী ৩ জনকে খুঁজে পাইনি। অনেক খোঁজা-খুজিঁর পর বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে থেকে চাচা মুজিবরের লাশ শনাক্ত করি। বাকী ২ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাই।

(ইউজি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯)