রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থেকেও গত ৪৮ বছরে ওয়াজ উদ্দিনের মুক্তিযুদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি। বয়সের ভারে নুহ্য এ বৃদ্ধ অভাব অনটনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি বলেন, আদর্শের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে একাত্তরে মৌলভী বাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ উপজেলায় যুদ্ধ করি। ভারত অম্পিনগর ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং শেষে মৌলভী বাজার সেক্টর নং-৩ এর অধিনে বীরত্বের সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। মরহুম মোখলেছুর রহমান কমান্ডারের নেতৃত্বে বিজয়বদি যুদ্ধ করে যাই। গত ৪৮ বছর ধরে আমি ওয়াজ উদ্দিন (৭৭) মুক্তিযোদ্ধার সাময়িক সনদ থেকেও স্বীকৃতি পাইনি। বর্তমানে ৩ ছেলে, ২ মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এক করুণ জীবন-যাত্রায় দিনাতিপাত করছি। মৃত আছিম উদ্দিনের ছেলে ওয়াজ উদ্দিনের যুদ্ধকালীন ঠিকানা মৌলভী বাজারের কমলগঞ্জ, পাত্রখোলার তাহেরা চা বাগানে ছিল এবং তৎকালীন সময়ে সেখানে বসবাস করছেন বলে জানান।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সেখানে আশ্রয় হারা হয়ে এক আত্মীয়ের আশ্রয়ে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা কেরোয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড, দুলা মিয়া মোল্লা বাড়ীতে নিত্যদিনের অভাবকে সঙ্গী করে জীবন কাটাচ্ছেন। বর্তমানের ঠিকানাই তার জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধিত হয়।

ওয়াজ উদ্দিন বলেন, অনেক শ্রমের বিনিময়ে ২০১৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রি মহোদয় কর্তৃক সাময়িক সনদপত্র পেয়েছেন। এমনকি তিনি মৌলভী বাজারে মুক্তিযুদ্ধের গেজেট তালিকায় ১১০৫নং ক্রমিকে অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, আমার সাথে আব্দুল মান্নান (মুক্তিবার্তা নং-০৫০৪০২০০৭৯), আঃ হামিদ (মুক্তিবার্তা নং-০৫০৪০২০০৬৬), রফিক মিয়া (মুক্তিবার্তা নং-০৫০৪০২০০৯৯) মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তারা আমাকে সহমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনাক্ত করেছেন।

একাত্তরের পাক-হানাদারদের বিরুদ্ধে মৌলভী বাজার, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জে যুদ্ধকালীন মৌলভী বাজার কমান্ডার মরহুম মোখলেছুর রহমানের অধীনে থেকে যুদ্ধ করেন এবং যুদ্ধ শেষে গ্রুপ কমান্ডার আব্দুল হামিদের নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গলে অস্ত্র জমা দেন। যার সত্যতা যাচাই-বাচাইয়ের পর শ্রীমঙ্গল উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদ কমান্ডার কুমুল রঞ্জন দেব ওয়াজ উদ্দিন কে সনাক্ত করণ নিশ্চিত করেন।

এ ব্যপারে যোগাযোগ করা হলে বর্তমানে মৌলভী বাজারের মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মমিন বলেন, ওয়াজ উদ্দিনকে আমি চিনি, উনি তাহেরা চা বাগানে ছিলেন, তবে তার ব্যপারে কাগজপত্র না দেখে এমুহুর্তে কিছু বলতে পারছি না।

মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজ উদ্দিনের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন (৭০) বলেন, আমার স্বামী মৌলভী বাজারে বিভিন্ন উপজেলায় ও এলাকায় যুদ্ধ করেছেন, অথচ যারা যুদ্ধ করেনি এমন অনেক ব্যক্তি সরকারি সকল সুযোগ সুবিধাতো পাচ্ছেই সাথে তাদের সন্তানরাও সুবিধা ভোগ করছে। আমার স্বামীর নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্ত করতে কমান্ডার সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে একাধিকবার গিয়ে ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছি। সবাই মোটা অংকের টাকা চাচ্ছে, টাকা দিলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম হবে ও গেজেট প্রকাশ হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছে। বর্তমানে আমি ও আমার অসুস্থ্য স্বামী এবং বেকার ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি। আমি চাই আমার স্বামীর মৃত্যুর আগে তার সকল মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার স্বামীকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিবেন এবং অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সুযোগ সুবিধা প্রদান করবেন। বর্তমানে অসুস্থ স্বামীর খরচ চালাতে আমি খুব হিমসিম খাচ্ছি, তার পাশাপাশি বেকার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তা ও হতাশায় ভুগছি।

(পিকেআর/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯)