প্রবীর সিকদার




আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে এক কিংবদন্তী নেতার নাম সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামীলীগের পুনরুজ্জীবন ও শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি করে দেশে ফিরিয়ে আনায় তার ভূমিকা অতুলনীয়! আর সেটা ভুলে যাননি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতা ওবায়দুর রহমানের কাছে হেরে গিয়েছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তখন শেখ হাসিনা সংরক্ষিত নারী আসনে তাকে শুধু সংসদ সদস্যই করেননি, করেছিলেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী। ওই ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদেই সাজেদা চৌধুরী যখন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী, তখনকার একটি বড় অপকর্মের দায়ে দুদকের মামলায় ফেঁসে গিয়েছিলেন বন মন্ত্রীর ছেলে শাহদাব আকবর চৌধুরী ওরফে লাবু চৌধুরী। ওই মামলায় লাবু চৌধুরীর ১৪ বছরের জেল হয়েছিল।

২০০৮সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ফিরে এলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কৃতজ্ঞতা বোধের অবস্থান থেকেই জিল্লুর রহমানের শূন্য পদ তথা সংসদ উপনেতার আসনে সাজেদা চৌধুরীকেই নিয়ে নেন। শুধু কি সংসদ উপনেতার পদ, একজন মায়ের আকুতিতে সাড়া দিয়ে শেখ হাসিনা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে ১৪বছরের সাজাপ্রাপ্ত শাহদাব আকবর চৌধুরী ওরফে লাবু চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির বিশেষ অনুকম্পায় সাজামুক্তিরও ব্যবস্থা করে দেন। সেই সাজামুক্তির বিষয়টি ছিল খুবই বিশেষ, একদিনও কারাভোগ না করেই লাবু চৌধুরী পেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির বিশেষ অনুকম্পা, যার নেপথ্যে কাজ করেছিল শুধুই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আকাশ সমান উদারতা।

২০১৪সালের নির্বাচনে জয়লাভ করবার পর শেখ হাসিনা আবার সংসদ উপনেতার আসনে বসিয়ে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে সম্মানিত করেন। ২০১৪-২০১৮ মেয়াদের শেষ দিকে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও তার উপনেতার আসন বহাল থাকে। ওই মেয়াদের শেষদিকে সংসদ উপনেতার অসুস্থতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংসদ উপনেতার সেই অপরাধী ছেলে লাবু চৌধুরী সালথা নগরকান্দার নানা উন্নয়নকাজের টাকা দুই হাতে লুটেপুটে খাওয়ার পরও শেখ হাসিনা সংসদ উপনেতার সম্মানের দিকে তাকিয়ে কিছুই বলেননি! এমনকি ২০১৮ সালের নির্বাচনে চারপাশের নানা সমালোচনা অগ্রাহ্য করে শেখ হাসিনা অসুস্থ সাজেদা চৌধুরীকেই সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন দেন এবং আওয়ামীলীগ বিশাল জয় পেলে তৃতীয় বারের মতো তাঁকেই সংসদ উপনেতার আসনটি দেন।

শেখ হাসিনার দুর্লভ উদারতার পরও যদি সাজেদা চৌধুরীর পুত্র শাহদাব আকবর চৌধুরী তথা লাবু চৌধুরীর আচরণ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্য অসম্মানজনক হয়, বঙ্গবন্ধু ভক্ত হিসেবে আমাদের আর যন্ত্রণার শেষ থাকে না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামীলীগ সভাপতি কিংবা দেশের প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বাংলা ও বাঙালির শেষ ভরসাস্থলও।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলা সমন্বয়ে গঠিত; নগরকান্দা ও সালথা। আসন্ন নগরকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও সালথা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা মনোনীত আওয়ামীলীগের নৌকার দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন যথাক্রমে মনিরুজ্জামান সরদার ও দেলোয়ার হোসেন। এরা দুইজনই এলাকায় পোড় খাওয়া ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। শেখ হাসিনার এই দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে এলাকার মানুষ যখন নেতার দূরদৃষ্টির প্রশংসায় পঞ্চমুখ, ঠিক তখনই খোদ শেখ হাসিনাকেই চ্যালেঞ্জ করে বসলেন সংসদ উপনেতার সেই ১৪বছরের সাজাপ্রাপ্ত ছেলে শাহদাব আকবর চৌধুরী ওরফে লাবু চৌধুরী! এই লাবু চৌধুরী শুধু ১৪বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্তই নন, তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর ডালিমের ভায়রা ভাই! এতকিছুর পরেও যে শেখ হাসিনা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সম্মান রক্ষা করে যাচ্ছেন, সাজেদা চৌধুরীর সম্মানের কথা বিবেচনা করেই লাবু চৌধুরীকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন, সেই লাবু চৌধুরীই শেখ হাসিনার মনোনীত দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে এলাকায় বিতর্কিত দুই জনকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দাড় করিয়ে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামীলীগকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।

শাহদাব আকবর চৌধুরী ওরফে লাবু চৌধুরী নগরকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুজ্জামান সরদারের বিরুদ্ধে জনৈক বাবুল কাজীকে এবং সালথা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে জনৈক ওদুদ মাতুব্বরকে দাড় করিয়েছেন! তিনি দুই উপজেলা এলাকায় গিয়েই আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে তার নিজের মনোনীত দুই প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার এবং তাদের পক্ষে প্রচারণা চালাতে নির্দেশ দিচ্ছেন! লাবু চৌধুরীর এমন অপচেষ্টা এবং অপপ্রচারে দুই উপজেলার আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাই হতবাক! একদিকে তারা লাবু চৌধুরীর রক্ত চক্ষুকে ভয় করছেন, আরেকদিকে দলনেতা ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেও কুণ্ঠা বোধ করছেন। সেই সঙ্গে আওয়ামীলীগের সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বনাশা বিভ্রান্তি। লাবু চৌধুরী কোনও অবস্থাতেই আওয়ামীলীগ বিরোধী এমন অপকর্ম করতে পারেন না।

আমি আশা করবো, নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে যে বিভ্রান্তি ও দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কাজ চলছে, সেটা নিরসনে অবিলম্বে সংসদ উপনেতার বহুল বিতর্কিত ছেলে শাহদাব আকবর চৌধুরী ওরফে লাবু চৌধুরীর বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাকে নগরকান্দা ও সালথা এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে। লাবু চৌধুরীর নোংরা অতীত ও বিতর্কিত বর্তমানকে মাথায় রেখে জরুরি এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃত্বকেই। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত, ব্যবস্থা নিতে হবে এখনই।

(ওএস/পিএস/২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯)