চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : প্রতিদিনই রাত পোহানোর প্রতীক্ষায় থাকেন দামুড়হুদার পোতার গ্রামের গাজী রহমান (৩৫)। দিনের শুরুতে ধারালো কোঁদাল ও ঝুড়ি নিয়ে বাড়ির থেকে বের হন কর্মের সন্ধানে। গাজী রহমানের মত অনেকেই শহরমুখি হন কাজের সন্ধানে। ভোরের সূর্যটা তখনো ঠিকমতো উঠেনি রঙ্গিন আকাশে।

কথা হচ্ছিল গাজী রহমানের সাথে। ছেলে মেয়ে স্ত্রী নিয়ে অভাবের সংসার তার। জীবিকার টানে প্রায় প্রতিদিন ভোরে তিনি গ্রাম থেকে পায়ে হেটে আসেন চুয়াডাঙ্গা শহরে। হাতে কোঁদাল আর ঝুড়ি নিয়ে বড় রাস্তার পাশে তিনি দাড়িয়ে থাকেন পণ্য হয়ে। অনেকেই গ্রাম থেকে কাজের খোজে আসে শহরে। বেলা বাড়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় মানুষ বেঁচাকেনা। প্রতিদিন ৪০০/৫০০ টাকায় এসব মানুষ বিক্রি হয় । এ কাজের আশায় অপেক্ষা করতে হয় ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত। দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা অপেক্ষার পর যেদিন কাজ হয় না সেদিন খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হয় এসব মানুষের।

একটা সময় ছিল যখন সমাজে দাস হিসেবে মানুষকে বিক্রি করা হতো। কালক্রমে সেই প্রথা উঠে গেলেও আধুনিক যুগে মানুষ এখনও পণ্য হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। শুধুমাত্র নামটিই হয়েছে পরিবর্তন। অভাবের সংসারে দুই বেলা ভাতের জন্য এসব মানুষ পণ্য হিসেবে দাড়িয়ে পড়েন রাস্তায়। ফাল্গুনের ভোরের চাদর মুড়িয়ে রাস্তার পাশে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকে অনিশ্চিত কাজের আঁশায়। আর দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে অল্প টাকায় এসব শ্রমিককে পন্য হিসেবে ব্যবহার করে সমাজের এক শ্রেনীর মানুষ।

চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্তরে ভোর হতেই প্রতিদিন দেখা মেলে একদল মানুষের। এসব মানুষ শ্রমিকের বেশে পণ্য হয়ে আসে শহরের রাস্তায়। বিভিন্ন নাম থাকলেও এসব মানুষ সবার কাছে শ্রমিক নামেই পরিচিত বেশী। গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষ আসেন এখানে কাজের খোঁজে। নানা পেশার মানুষের এ যেন এক মিলনমেলা। শ্রম বিক্রির এই বাজারে অনেকেই কিনতে আসে দিনমজুর শ্রমিক। এসব মানুষের প্রতিদিনই মেলে না কাজের নির্দিষ্ট খোজঁ।

চুয়াডাঙ্গা শহরে শ্রম বিক্রি করতে আসা খাইরুল আলী বলেন, গ্রাম থেকে শহরে কাজ করতে আসি। বাড়তি কিছু বেশী টাকা পাওয়ার আসায়। তাই শহরে প্রতিদিন শ্রমিক হয়েই কাজ করতে আসি। আমার মতো গ্রামের অনেকেই আসে শ্রম বিক্রি করতে। অনেকে আবার বাড়তি কিছু টাকার আশায় বিকেল পর্যন্তও কাজ করে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সুজনের সভাপতি (সুশাসনের জন্য নাগরিক) অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান পিবিএ কে বলেন, সামান্য কিছু টাকার জন্য সারাদিন কাজ করতে চাই এসব মানুষ। তবে কষ্ট হলেও সত্যি এসব মানুষকে সমাজের এক শ্রেনীর শিক্ষিত মানুষ পণ্য হিসেবে মনে করে। যারা মানুষকে মানুষ না ভেবে পণ্য ভেবে থাকে তারা সমাজের শিক্ষিত অসুস্থ্য মানসিকতার কীটপতঙ্গ বলে মনে করেন তিনি।

(টিটি/এসপি/মার্চ ০১, ২০১৯)