তৈয়ব আলী

প্রতিটি মানুষের জীবন ভিন্ন। কেউ কারও মত না। হতে ও পারে না। আর পারবেও না।

সময় এখন রাত ১:৪৫ মিনিট। নির্দিষ্ট একটা গন্ডির মধ্যে দাঁড়িয়ে কিছু মানুষের জীবনের ধারা দেখছি। দুজন দম্পতি চায়ের টং দোকানে এত রাতেও চা বিক্রি করছে। কারন পেট চালাতে হবে। সংসার ধর্মের টানাটানি দূর করাই মূল লক্ষ্য।

কয়েকজন নারী পরিচ্ছন্ন কর্মী শহরটাকে সুন্দর করার কাজে নিয়োজিত। যেন আমরা সকালটাকে পরিচ্ছন্ন রূপে পায়। তবে সেক্ষেত্রেও রয়েছে আবার সেই সংসার,ক্ষুধা আর অর্থ অর্জন। কারনটা হতে পারে রাতের ডিউটি টা করলে অর্থ বেশী পাওয়া যায়।

কিছু রিক্সা আর সিএনজি ওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে প্যাসেঞ্জারের জন্য। কারন রাতের ভাড়া বেশী পাওয়া যায়। সকাল হলেই তো বাজার করতে হবে।হয়ত কাল মেয়ে বা ছেলেটার স্কুলে/কলেজে অর্থ দিতে হবে। আমি হাসপাতালের লবি তে বসে আছি। সারা রাতই বসে থাকতে হবে। চেয়েছিলাম এখানে মসজিদ আছে তাতে গিয়ে একটু ঘুমোবো কিন্তু সেখানে ঘুমানোটা তাদের নিয়মে নেই। ঘুমোতে হলে এই চেয়ারেই ঘুমোতে হবে।আর তা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এমারজেন্সি গেটের বাইরে কাজ চলছে সেখানে পাচজন ইট,সিমেন্ট, বালি নিয়েই ব্যস্ত।ফার্মেসির লোকটা বসে আছে। কার কখন কোন ঔষধ লাগে সেই চিন্তায়। হাসপাতালের কর্মীরা ব্যস্ত টয়লেট পরিষ্কার করতে,কোথায় পানি নেই সেখানে পানি রাখতে হচ্ছে। কোথায় ডাষ্টবিন ময়লায় ভরে গেছে সেটা খালি করে পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় একটু ভুল হলে বড় স্যারেরা চাকরি খেয়ে দেবেন। এই লোকগুলোর ব্যবহার বা আচরণ খুব একটা ভাল না। হয়তো ময়লা পরিষ্কার করতে করতে কথা গুলোও ময়লা হয়ে গেছে। যা হয়তো তাদের অজান্তেই।

এখানে বসে দেখছি এখনো এমারজেন্সিতে রোগীর আগমন ঘটছে। পরিবারের লোকজন বেশ ছোটাছুটি করছে।কিভাবে মানুষটাকে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া যায়। দাড়োয়ানটা বেচারা একটু বসতে ও পারছেন না। কি করার। সে তো চাকরি করে। মানে চাকর। তাকে সারারাত হেটেই বেড়াতে হবে। শারীরিক কান্তি তো আছেই। তবে সবার মাঝেই একটা মানসিক ক্লান্তির ছাপ রয়েছে।মনে হচ্ছে বলতে চায় যে,আর কত? কারও কথা কেউ শুনবে না,শুনছে না। আর শুনে কি লাভ। সমাধান কি সে দিতে পারবে?

বেশ কয়েকটা ঘটনা বললাম। এর মাঝে বলতে চেয়েছি বা বুঝাতে চেয়েছি জীবন জিবীকার কথা। তবে এর মাঝে চেষ্টা করছিলাম মানুষ খোজার। সবাই ব্যস্ত। কথা হচ্ছে, কাজ চলছে। তবুও চোখের সামনে ছোট একটা বিষয় নজর কাড়লো আর তা দেখে মনে হচ্ছে সল্প হলেও এখনও মনুষ্যত্ব আছে। আর থাকবে যত দিন 'মানুষ' থাকবে। শুরুতে বলেছিলাম কেউ কারো মত না। তবে হ্যা, শুধু 'মানুষ' গুলোই 'মানুষের' মতই হই

লেখক : শিক্ষার্থী, জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।