আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বালাকোটের যে স্থানে ভারত যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালিয়ে জয়েশ-ই-মোহাম্মদের প্রশিক্ষণ ঘাঁটি ধ্বংস ও ৩০০ জঙ্গিকে হত্যার দাবি করেছে; সেই স্থানের উচ্চ-রেজুলেশনের ছবি স্যাটেলাইট থেকে সংগ্রহ করেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ছবি পর্যবেক্ষণের পর ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যম বলছে, ভারত জয়েশের প্রশিক্ষণ শিবির ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জঙ্গি হত্যার দাবি করলেও বোমা হামলার স্থানে এখনো দাঁড়িয়ে আছে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর পরিচালনাধীন একটি ধর্মীয় স্কুল। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক বেসরকারি স্যাটেলাইট অপারেটর প্লানেট ল্যাব ইনকরপোরেশন বালাকোট হামলার ছবি প্রকাশ করেছে।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ভারতের বিমান হামলার ছয়দিন পরও ওই স্থানে মাদরাসার ছয়টি ভবন দাঁড়িয়ে আছে। তবে সরকারিভাবে এখনো ওই হামলার উচ্চ-রেজুলেশন সম্পন্ন ছবি প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু প্ল্যানেট ল্যাবের ৭২ সেন্টিমিটারের ছবিতে বালাকোটের হামলাস্থলে পরিষ্কারভাবে অবকাঠামো দেখা যায়; যেখানে হামলা চালানোর দাবি করেছে ভারত।

এই ছবিটির সঙ্গে ২০১৮ সালের এপ্রিলে স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া বালাকোটের ওই স্থানের ছবির তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ভবনগুলোর ছাদে দৃশ্যমান কোনো গর্ত নেই, পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন নেই, দেয়ালে ফাঁটল নেই। এমনকি মাদরাসার গাছপালাও অক্ষত রয়েছে, বিমান হামলার তেমন কোনো আলামতই নেই সেখানে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে ওই হামলা চালানো নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেসব দাবি করে আসছেন, সেসব দাবি নিয়ে এখন সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ভারত বলছে, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বালাকোটের জাবা গ্রামের কাছে মাদরাসা স্থানের আশপাশের সব স্থাপনা হামলার লক্ষ্য ছিল।

স্যাটেলাইটে পাওয়া বালাকোটের জাবা গ্রামের অক্ষত স্থাপনার ছবির ব্যাপারে জানতে চেয়ে ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ই-মেইল করেছে রয়টার্স। তবে সেই ই-মেইলের কোনো জবাব দেয়নি নয়াদিল্লি।

মিডলবুরি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের পরিচালক জিফ্রে লিউইস। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাওয়া অস্ত্র স্থাপনা ও সিস্টেমের বিশ্লেষণ অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তিনি বলেন, বালাকোটের উচ্চ রেজুলেশনের ছবিতে বোমা হামলার কোনো ক্ষয়ক্ষতির আলামত দেখা যাচ্ছে না। বিমান হামলায় কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেব্যাপারে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।

তবে দেশটির সরকারি এক সূত্র গত সপ্তাহে জানায়, অভিযানের সময় ১২টি মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান থেকে এক হাজার কেজি বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। অন্যদিকে, মঙ্গলবার দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিমান হামলায় ইসরায়েলের তৈরি প্রায় এক হাজার কেজি স্পাইস-২০০০ গ্লাইড বোমা ব্যবহার করা হয়েছে।

কিন্তু এ ধরনের একটি বোমা কংক্রিটের তৈরি যেকোনো ধরনের স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম। জেমস মার্টিন সেন্টার ফর ননপ্রোলিফারেশন স্টাডিজের দুই জ্যেষ্ঠ গবেষক লিউইস এবং ডেভ শ্যামারলার বলেন, যে ধরনের বোমা ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে, তা ছবির স্থাপনাকে অবশ্যই ধ্বংস করতো।

(ওএস/এসপি/মার্চ ০৬, ২০১৯)