মানিক বৈরাগী


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাতি ও জাতির আশা ভরসার আলোক বর্তিকা। বাংলার মানুষ একদা ডাকসুর দিকেই তাকিয়ে থাকতো অনেক স্বপ্ন নিয়ে, বাংলাদেশ বিনির্মাণ সুখ সমৃদ্ধির আশায়। ৫০-৬০-৭০এ তাকাতো পাকিস্তানি ধর্মীয় জংলী শাসন শোষণ প্রতিবাদ প্রতিরোধের আশায়। গ্রাম থেকে আমাদের পিতা মাতা অগ্রজরা যেভাবে থাকাতেন সেই ভাবে আমিও স্বপ্ন দেখতাম। আল্লাহ সব আশা পুরন করেনা। যোগ্যতাও লাগে স্বপ্ন দেখতে। তবুও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পুরন না হলেও ছাত্রনেতাদের ডাকে, লড়াই সংগ্রামে যাওয়া আসা হয়েছে। সেই সব স্মৃতি থেকে আজকের এই লেখা।কারন ডাকসু নির্বাচন। ১৯৮৯সন, স্বৈরাচার এরশাদের সময়, অবরুদ্ধ বাংলাদেশ, বাংলাদেশের রাজনীতি, সাহিত্য সংস্কৃতি সকল শুভ কাজ। চারদিকে পুলিশ,সেনাবাহিনী, বিজিবি (বিড়িয়ার) এর টহল। মানুষের মৃত্যুর কোন গ্যারান্টি নাই। চাখানা, আড্ডা, বিয়ে সামাজিক জীবনও যেনো তটস্থ।

সাইদির ওয়াজ মাহফিলের নামে জামাত শিবিরের নগ্ন উল্লাস উম্মত্ততা। জ্ঞানের পাঠ প্রদীপ যেনো ক্যান্টনমেন্ট ও কসায়খানা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের এক মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় কে তখনো শিবির ক্যান্টনমেন্ট বানাতে পারেনি।
তৎকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংঘটন গুলো মরতে তাদের মধ্যে বোধোদয় হলো পরিবেশ পরিষদ গঠন করতে।এসব কারনে শিবির প্রকাশ্য হতে পারেনি।

সুচতুর এরশাদ তার ছাত্রসমাজের মধ্যে কৌশলে অন্তর্ভুক্ত করলেন শিবির ক্যাড়ারদের।ছাত্রদলের অভি নিরু পাগলা শহিদদের কিনে নিলেন।জাসদ ছাত্রলীগ এর ভেতরে থাকা অস্ত্রবাজদের দিয়ে অস্ত্রের মহড়া দিতেন।অতঃপর জাসদ ইনু ও ছাত্রলীগ (শি-মু-মু-না)সিদ্ধান্ত নিলেন কোন ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী কে জাসদ ছাত্রলীগ এ স্থান দিবে না।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন,সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট,ছাত্রমৈত্রী(গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী একিভুত হয়ে ছাত্রমৈত্রী)আরো কিছু ছোট ছোট বাম ছাত্র সংঘটন মিলে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।

এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অপরাজেয় ভূমিকা রাখলো।তারই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এলো ডাকসু নির্বাচন।

এই ডাকসু নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এর নেতৃত্বে ৮দলিয় জোট ও জাসদ- বাসদ এর তত্তাবধানে ৫দলিয় বাম জোট। যদিওবা আজকের ওয়ার্কস পার্টি সহ কয়েকটি মাও পন্থি বাম সংঘটন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৭দলিয় জোটে অবস্থানে থেকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতো।

তবে ওয়ার্কাস পার্টির গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন,ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ এর ছাত্র মৈত্রী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর সাথে অঙ্গিভুত।অঙ্গিভুত ছিল সাম্যবাদী দলের বাংলাদেশ ছাত্র ধারা, ন্যাপ মোজাফফর এর ছাত্র সমিতি।

বাসদ (মাহবুব-মান্না)র ছাত্রলীগ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাথে ছিল। সাথে ছিলো বদর উদ্দীন উমর ও সাংবাদিক নির্মল সেনের ছাত্র সংঘটন দুটি।নির্মল সেনে শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের ছাত্র সংঘটন এর নাম এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না।

বদর উদ্দীন উমরের ছাত্র সংঘটনের নাম ছাত্র ফেডারেশন। যা আজ দু ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ উমরের সাথে আর এক ভাগ জোনাইদ সাকির সাথে। তখনো মুখ্যত ফরহাদ মজহার এর একটি নাম স্বর্বস রাজনৈতিক বাম সংঘটন ছিল, নাম মনে পড়ছে না। নেপথ্যে ছিলেন আজকের নিউ এজ পত্রিকার সাবেক মালিক ও সম্পাদক প্রয়াত এনায়েতুল্লাহ খান। এদের ছাত্র সংঘটন ছিল ছাত্র ঐক্য ফোরাম। যার নেত্রী ছিল আজকের গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা মোশরফা মিশু। পরে ফরহাদ মজহারের সাথে মিশুদের বনি বনা না হওয়ায় সংঘটন টি দ্বি খন্ডিত হয়ে যায়।

এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাম সংঘটন গুলোও ডাকসু তে একটি প্যানেল দেয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ অন্তর্ভুক্ত ছাত্র সংঘটন সমুহ একটি প্যানেল দেয়। সেই প্যানেলের সহ সভাপতি পদে নির্বাচন করে আজকের আলোচিত সমালোচিত সুলতান মোহাম্মদ মনুসুর আহমদ সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান জাসদ ছাত্রলীগ এর ডাক্তার মুস্তাক আহমদ আর সহ সাধারণ সম্পাদক পদে ছাত্র ইউনিয়ন এর নাসির উদ দোজা।

আমি তখোন ছাত্র ইউনিয় কক্সবাজার জেলা সংসদ এর সাধারণ সম্পাদ। সদ্য ইন্টারে ভর্তি হয়েছি।
টগবগে তারুণ্য স্বপ্নে বিভোর ডাকসু তে জিতে দেশে সমাজতন্ত্র কায়েম করবো। আওয়ামীলীগ এর সংবিধানে তখনো সমাজতন্ত্র শব্দটি উঠে যায়নি। তাই সুলতান-মুস্তাক-নাসির সমাজতন্ত্র গণতন্ত্রের সৈনিক। একটি বিপ্লবী সংগ্রামের আশায় আমাদের পার্টির নেতাদের ডাকে কক্সবাজার থেকে চাঁদা তুলে ঘরের গোলার ধান চুরি করে বিক্রি করে কয়েক জন বিপ্লবী বন্ধু মিলে ঢাকা চলে গেলাম।নির্বাচনের সহায়ক কর্মী হিসাবে।

ছিলাম জহুরুল হক হলে।জহুরুল হক হলে ফিরোজ বকস তোহা ভাই।তিনি আমার পুর্ব কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তখোন ছাত্র ইউনিয়ন এর নেতৃত্বে ছিলেন মুস্তফিজুর রহমান বাবলু, তাহের উল্লাহ ও নাসির উদ দোজা। নাসির উদ দোজা এজিএস পদে নির্বাচন করছে।আমাদের উপর নির্দেশ ছিলো কাজ করতে হবে পুর্ণ প্যানেলের।

সিপিবি সভাপতি ছিলেন পরম শ্রদ্ধেয় মার্কসিয় ঋষি কমরেড মণি সিংহ।যিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকাকার ও জাতির পিতা শেখ মুজিবের ও উপদেষ্টা ছিলেন। এই ঋষির স্নেহ আদরের পেয়েছিলাম।পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফরহাদ। দারুণ এক মানব।ফরহাদ ভাই ও বাকশালের মেম্বার ছিলেন। আজ দুজনেই আজ প্রয়াত। তাদের প্রতি পরম শ্রদ্ধা।

৮৯এ মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তি যখন ত্যাগের মহিমায় এক কাতারে যৌথ অভিন্ন দেশ জাতি, ছাত্র সমাজের স্বার্থে এক কাতারে থেকে ছাত্র সমাজের বিজয় ছেয়েছিল তখোন ডাকসু মুক্তিযুদ্ধের হয়ে বিজয়ী হলো।
আজ এই একবিংশ শতকে কমরেড মণি সিংহ ও ফরহাদও নাই, সোভিয়েত ইউনিয়ন, সেই সিপিবি ছাত্র ইউনিয়নও নাই।

বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের ঐক্যবদ্ধ ঐক্যবোধ থেকে ছিটকে পড়েছে সেই চেতনাবাহিত মুক্তিযোদ্ধা ফ্রন্ট।
মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহীক চেতনা লক্ষ্য কে বিনির্মাণে নিসঙ্গ শেরপার মতো টেনে নিতে হয় আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ কেই।

নব্বই এ এরশাদের পথনের পর কথা ছিলো তিন জোটের রুপ রেখা বাস্তবায়ন হবে।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস খালেদা জিয়া, ডাকসুর আমান খোকনেরা তা হতে দিলনা।আমান হলো খালেদার কামান।
৭ দলীয় জোটে যে সব বাম ও কতিপয় সংঘটন ছিলো।বেগম খালেদার সাথে তাদের দীর্ঘ আন্দোলন সখ্যাতা, লড়াইকে অবহেলা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে জামাতের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আরোহন করলো।
এরশাদ যে সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষ টি রোপন করেছিল তা বিপুল সমারোহে ডালপালা বৃদ্ধি করে মহিরুহতে পরিণত করে আমাদের নব্বই এর একটি সুখী গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র বিনির্মাণের স্বপ্ন কে ভেঙ্গে ধুলায় মিশিয়ে ক্ষান্ত হলো না, জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিবাহিনী তৈরি করে শরবত পান করতে আজ এ পর্যন্ত।

খালেদা নির্বাচিত হওয়ার সাথে আমান -পিন্টুরা প্রতিটি ক্যাম্পাস কি হলো তৎকালিক ক্যাম্পাস জানে।৯১এ পা কাটলো শিবির চবি থেকে।এভাবেই হাজার হাজার ছাত্রের শিক্ষা জীবনে কবরে পরিণত হলো।
সেই বাম শিবির সর্বাধিক জনপ্রিয় ছাত্র সংঘটন টি আর তাদের অবস্থান থেকে বিচ্যুত হলো। তাদের কে একদা যেসব মাওবাদী ছাত্র সংঘটন গুলো রুশ ভারত

সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদের দালাল বলতো তারাই আজ তাদের বন্ধুতে পরিণত হলো।তারা এখন বাম বিচ্যুত মার্কস লেনিন ব্যবসায়ীতে পরিণত হলো। তার জলন্ত প্রমাণ তারা ছাত্র শিবির ছাত্রদল ও তারেকের প্রোডাক মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিরোধী দের সাথে মিলেমিশে সিপিবি ন্যাপ ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা কমান্ডের ২৫হাজার শহীদ বিপ্লবীর সাথে প্রতারণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক রাতের তাণ্ডব চালালো।
সেই রাশেদ নুরুদের প্যানেল কে প্রকাশ্য সমর্থন দেয় শিবির। এসব কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাহিত শহীদী কাফেলা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সমর্থিত শোভন রাব্বানি প্যানেলের বিজয় চাই ডাকসু তে। ওরা জাতি, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা সর্বোপরি ছাত্র সমাজের সাথে প্রতারণা করে না।

সুলতান -মুস্তাক-নাসির প্যানেল বিজয়ের পর ছাত্রদল যে ভাবে ক্যাম্পাসে ছাত্র ছাত্রীদের বিজয় মিছিলে হামলা করেছিল হলে হলে নির্যাতন নিপিডনের তান্ডব চালিয়েছিল তা এখনো আমার চোখে নারকীয় ভিবিশিকা চোখে ভাসে। অথচ আমান -খোকনেরা নির্বাচিত হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তান্ডব না চালিয়ে ফুলের মালা দিয়ে তাদের স্বাগত জানিয়েছিল। তো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একমাত্র ছাত্র সংঘটন যা ক্যাম্পাস রাখে নিরাপদ, ছাত্রবান্ধব। জয় হোক শোভন -রব্বানি পরিষদ।


লেখক : কবি ও নব্বই এর সাবেক ছাত্রনেতা।