মানিক বৈরাগী


গতকাল (সোমবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নারী কর্মীদের ব্যালট বাক্সে লাথি মারার দৃশ্য দেখে পুরানা বাম হটকারি রাজনীতির কথা মনে পড়ে গেলো।সেই স্মৃতি,শ্রুতি ও পাঠ থেকে এই লেখার অবতারণা। 

হজরত্তুল আল্লাম পীরে কামেল কমরেড মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি। আওয়ামীলীগ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, পরে একাংশের সভাপতি। তিনি লড়াই সংগ্রামের যাদুকরী আয়োজনকারী, বাংলায় মজলুম জননেতা হিসাবে পরিচিত। তিনি আবার বাংলাদেশে কমরেড মাও যে দং কে বাংলার চেয়ারম্যান হিসাবে মান্যকরতেন।১৯৭০এর নির্বাচনী জরিপে দেখলেন ন্যাপ ভাসানির জনপ্রিয়তায় ভোট পাবেন ৩০ শতাংশ। আর শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তায় ভোট পাবেন প্রায় ৪৫ থেকে ৬০ শতাংশ।

তিনি যেহেতু চায়নার মাওবাদ প্রতিষ্টায় বদ্ধ পরিকর সেহেতু তিনি আর ভোটে যেতে রাজি না। এরি মধ্যে চায়না ও পাকিস্তানের সাথে অস্ত্র ও বাণিজ্য চুক্তি হয়ে গেলো।৬০থেকে ৭০ এর দশকে মার্কিন চায়না কঠিন বন্ধুত্ব। এই কঠিন বন্ধুত্বের কারনে পাকিস্তানের সাথে চায়না ও মার্কিন জোট এক ও অভিন্ন।
উভয় রাষ্ট্রর ও জোটের তখন মার্কিনীদের নেতৃত্বে ন্যাটো শামরিক জোট তৃতীয় বিশ্বে খুব দাপটের সহিত কতৃত্ব করছে। মার্কিন ও ন্যাটোর তত্তাবধানে অধিকাংশ দুর্বল রাষ্ট্র ও এশিয়ার অনেক রাষ্টে সামরিক বাহিনী ক্ষমতায়।

এশিয়ায় বৃহৎ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে ভারত এদের বিষ ফোড়া হিসাবে গান্ধী পরিবার ছড়ী ঘুরাচ্ছে।ভারতের মিত্র হলো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্রদের নিয়ে আছে ওয়ার্স জোট।এ জোট চায় বিশ্বে যত উপনিবেশিক প্রদেশ ও রাষ্ট্র আছে তাদের স্বাধীনতা ও মুক্তি। এ দুই গ্যাঁড়াকলে ভারত পাকিস্তানে অবস্থিতি। ৪৭এ গোল টেবিলের হিসেব নিকেশে অবিভক্ত বাংলা বা বাংলা ফেড়ারেশন হতে পারেনি মাড়োয়ারি ও নেহেরু ও জিন্নার কুট বুদ্ধির কারনে। এই ক্ষত রয়ে যায় সহোরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবের মনে।তখন শেখ মুজিবুর রহমান তরুণ ছাত্র নেতা।

সেই টুঙ্গি পাড়া থেকে কলকাতায় গমন, সমগ্র বাঙ্গালি র ভেতর নেতাজী সুভাষ বসুর চিন্তা দর্শন কমরেড মোজাফফর আহমদ এর ক্ষণিক সংস্পর্শে পেয়েছিলেন। এই যে স্বাধীনতার স্বপ্নের বীজ বপন করেই কমরেড নিজ পার্টিতে আত্ম নিয়োগ করলেন। এরপর কলকাতার মেয়র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী থেকে নির্বাচন, আন্দোলন, সংঘটন পরিচালনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ-বর্জনের কৌশল, বিনয় স্থরে স্থরে শিখে নিলেন তার বহিঃপ্রকাশ ৭০এর নির্বাচন।

৭০এর নির্বাচনে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান পুর্ব বাংলার জনগন কি চায়,কাকে চায় তা তিনি টের পেয়েছিলেন। কারণ শেখ মুজিবুর রহমান সকল স্থরের মানুষের সাথে অতি সাধারণ ভাবে মিশতেন কথা বলতেন উচ্ছাসের সহিত। যাতে মানুষ আওয়ামীলীগ ও আন্দোলন সংগ্রামের প্রতি আস্থা রাখেন। এভাবে শেখ মুজিবুর রহমান শেখ সাহেব, মুজিব ভাই, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির জনকে পরিণত হলেন।

৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান উপলব্ধি করেছিলেন এই জগাখিচুড়ী জোট নিয়ে দেশ স্বাধীন করা যাবেনা।এবং বড় বড় তাঁর অগ্রজ নেতাদের মেরুদণ্ডের দৃড়তা ও নৈতিকতার ঘাটতি থেকেই তিনি একক ও আওয়ামীলীগ সিদ্ধান্ত নেন ৭০এর নির্বাচনে অংশ নিবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ৭০এর নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ঘোষণা করলেন তখন জাতির আকাঙ্ক্ষা কে অবাঞ্ছিত করে, জাতির আশার সাথে প্রতারণা করে কমরেড মাওলানা ঘোষণা দিলেন ভোটের বাক্সে লাথি মার জনতন্ত্র কায়েম কর।

পীর সাহেবের কমরেড আব্দুল হক বললেন, বন্ধুকের নলই ক্ষমতার উৎস। আবার পীর অন্য সাগরেদ আনোয়ার জাহিদ, (যুদ্ধাপরাধী ও এরশাদের ঝাড়ু মন্ত্রী) শ্রমিক নেতা কাজী জাফরেরা নির্বাচন্রর বিরোধীতা করলেন। কিন্তু ওনারা নির্বাচনের বিরোধীতা করলেন বটে কমরেড পীর থেকে বিশাল একটি অংশ বেরিয়ে এসে আলাদা নামে নির্বাচনে এলেন। এত ষড়যন্ত্রের পরও নির্বাচন ঠেকানো গেলোনা,আওয়ামীলীগ বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হলেন। এবার পীর সাহেব সুর পাল্টালেন।

আওয়ামীলীগ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর হাত ধরে ৭১। একাত্তরে বিষয় এখানে আর নতুন করে উল্লেখ করার দরকার নাই। তবে একাত্তরে সেই মাও ও মাওলানার বিপ্লবীদের অনেকেই পাকিস্তান পন্থি রাজাকার হলেন, অনেকে দ্বিমুখী যুদ্ধ করলেন, অনেকেই আবার মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ এর সাথে একাত্ত হলেন। মাওলানা সাহেব উপায়ন্তর না দেখে ভারতে চলে গেলেনে।ওখানে নিরাপদে ছিলেন, আরমে ফিরলেন।

মাওলানা কর্মবীর নেতা, তিনি এবার নিজের কর্মীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলেন।পিতা হা না কিছুই বলতেন না।কারন মুজিব মাওলানা ভাসানি কে জানতেন বুঝতেন। মাওলানা ৭৩এর নির্বাচনে ধানের শিষ প্রতিকে নির্বাচনে এলেন। এখন যেমন বিএনপি পরাজয় জেনে দিনের বারটার মধ্যে নির্বাচন বয়কট করেন, মাওলানাও একি রকম করতেন।এরি ফাকে এদের ভোট গিয়ে ন্যাপ মোজাফফরের কুঁড়েঘর মার্কায়।
এলো পছাত্তর।

খন্দার মুস্তাক কে পত্রিকার মাধ্যমে স্বাগত জানালেন।জিয়া ক্ষমতা দখল করলেন, সশরীরে গিয়ে ফুলের মালা দিয়ে অভিনন্দন দিলেন।জিয়াকে জাগদল করার পরামর্শ দিলেন। নিজের ধানের শিষ টিও বিএনপি কে দান করে দিলেন।

১১ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ডাকসু নির্বাচনে বাম

বাম ছাত্র জোট, ছাত্রদল, শিবির সমর্থিত ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ডাকসু নির্বাচন ও ভাসানীর ভোটের বাক্সে লাথি মারো অবস্থ। এরা মিথ্যাচার ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে সবকিছু দখলে নিথে চায়।

যেমন মাওলানা ভাসানীর পত্রিকার নাম ছিল" হক কথা"য় নিয়মিত মিথ্যাচার ও গুজব ছড়াতো।এই সময়ে এসে দেখি এরা গুজব ছড়ানো তে হক কথার ওস্তাদ। সেই সময়ে হক কথা, গণ কন্ঠ, ইত্তেফাক নিয়মিত গুজব ছড়াতেন।

এখনো গুজব ছড়ানো জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর সাথে পত্র পত্রিকা তো আছেই। সেই সময়ে এসব ভালোভাবে দেখবাল ও সহায়তা পাওয়ার জন্য তাহের উদ্দিন ঠাকুর ছিল বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী সভায় বর্তমানেও একি ভাবে দেশরত্নের অনুমোদন পাওয়া কত চেনেল পত্রিকা যে আছে তার কোন ইয়াত্তা নেই, আছে বুলবুল গং। তো ডাকসু নির্বাচন ও ভাসানির ভোটের বাক্সে লাথি মারো একি সুত্র গাঁথা।

তখন তিনি মুখে বলেছেন, আর এখন নিজেরাই লাথি মেরে প্রমাণ করছেন। এতে নিজেরাই সাধারণ জনগনের কাছে যেমন ভাসানি অনুসারীরা মানুষের আস্থা হারা হয়ে অনেকেই ভাসানির পথ ধানের শিষ যেমন জিয়া কে দিয়েছিলেন,একি তার অনুসারীরা জিয়া এরশাদ খালেদা, খালেদা নিজামীর হাত কে বলিয়ান করেছেন।

আজকের ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল ছাত্র জোট সহ অনেকে বিগত কয়েক বছর ধরে দেখছি তাদের শ্রম ত্যাগ মেধা জামাতের নুরুদের উপহার দিচ্ছেন সেই ধানের শিষ উপহার দেয়ার মতো। অথচ এই ছাত্র ইউনিয়ন আজকে যাদের সাথে জোট করেছেন তাদের অন্য শরিকেরা নব্বই দশক পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শিবির প্রতিরোধের চাইতে ইউনিয়ন প্রতিরোধ ছিল তাদের ফরজ কাজ। আজ সেই ইউনিয়ন এখন তাদের নিয়ে বিএনপি জামাত কে শক্তিশালী করছে।ফলে সমাজতন্ত্র পিয়াসি মানুষ গুলোও তাদের প্রতি নিয়মিত আস্থা হারাচ্ছেন। এক পর্যায়ে হয়ত তারাও ভাসানী পন্থি ছাত্র সংঘটন ও রাজনৈতিক বিচ্ছিন্ন সংঘটনে পরিণত হতে সময়ের বাকি।

সর্বোপরি ডাকসু তে সাধারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পিয়াসি ছাত্র জনতার বিজয় হয়েছে। এগিয়ে যাক ডাকসুর শোভন রব্বানির ছাত্র সমাজকে দেয়া প্রতিশ্রুতি।

লেখক : কবি ও নব্বইয়ের সাবেক ছাত্র নেতা, কক্সবাজার।