পাখি

নীলের অনেক দিনের শখ একটা টিয়া পাখি পোষবে।নওয়াপাড়া বাজার থেকে হাজার টাকার বিনিময়ে একটি সুন্দর , গলায় মালাযুক্ত টুকটুকে লাল ঠোটের টিয়া পাখি ক্রয় করে সে।নামকরণ করা হয় বেটুয়া। বেটুয়া মানে পুত্র।

বেটুযার জন্য ছোলা পাকা কাচা মরিচ, আর আঙ্গুর কিনে নিয়ে আসে সে।বেটুয়া এক পায়ে ধরে কুটকুট করে আঙ্গুর খায় বেশ ভাল লাগে তার।

সাত সকালে বেরিয়ে রাতে বাসায় ফিরে নীল্বাসায় ফিরে বুট, কলা আঙ্গুর খেতে দেয় বেটুয়াকে।বেটুয়া বেটুয়া বলে ডাকে নীল পাখিটিকে। ব্যাটা টিয়া পাখি বড্ড বেরসিক, খাচার ভেতরে খালি তিরিং! বিরিং করে। হঠাৎ নীলের বদলী হয় নিজ এলাকায়।সুন্দরবন এক্সপ্রেস আসতে একটু লেট হবে।

বেটুয়াকে নিয়ে নওয়াপাড়া রেল স্টেশনে বসে থাকে সে।অনেকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় অনেকে নাম জিজ্ঞেস করে।বিচিত্র অভিজ্ঞতা। ট্রেন আসে প্লাট ফরমে। বেটুয়া সমেত উঠে পরে নীল।

ট্রেনে সহযাত্রীদের বেটুয়া সর্ম্পকে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে হাপিয়ে উঠে। রাতের ট্রেনে বেটুয়ার চোখে ঘুম নেই।সিটের নিচ থেকে হঠাৎ ইক্যা! ক্যা! শব্দ করে চেচিয়ে উঠে বেটুয়া।মনে হয় ইদুর দেখচে বলে রহমত মিয়া।

বেটুয়া সমেত বাড়িতে এলে বরই খুশি হয় নীলের মা।ভরা পূর্ণিমা রাতে ছাদে বসে বেটুয়ার সাথে কথা বলে নীল মাঝে মাঝে খাঁচার ফাঁক দিয়ে পা লেজ ধরে টান দেয়, সে ব্যাটা বড্ড ফাজিল খালি ক্যা ক্যা করে অন্য কথা বেটুয়ার মুখ থেকে বেড়োয় না।

ভারত থেকে প্রচুর আঙ্গুর নিয়ে আসে নীলের ভাই। প্রতিদিন আঙ্গুরফল পায় বেটুয়া কিন্তু কিছুতেই পোষ মানে না সে। হঠাৎ করেই একদিন নীলের চাকরিটা চলে যায়। বেকার হয়ে পরে সে, বেটুয়ার বুট কেনার টাকাও থাকে না।

মা একদিন কথার ছলে বুট কেনার জন্য খোটা দেয় প্রচন্ড অভিমান হয় তা খাঁচা সমেত বেটুয়াকে বিসর্জন দেওয়ার জন্য পুকুরে নিয়ে যায় সে, অনেকক্ষন চুবিয়ে রাখার পর উপরে উঠায়।

বেটুয়া একেবারে চুপসানো অবস্থায় মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে। চিৎ হয়ে দু পা উপরের দিকে তুলে, হাকরে জিহবা বের করে বড়বড় শ্বাস নিতে থাক্। সে এক ভয়ানক দৃশ্য।নীলের মনে তীব্র বেদনা অনুভূত হয়। প্রিয় বেটুয়াকে নিজ হতে খুন করতে চলেছে সে। রোদে বেটুয়া কিছুটা সুস্থ হয়।

ইশ্বরের কাছে ক্ষমা চায় নীল্, নিজেকে ধিক্কার দেয় সে।অন্তত একটা পাখিকে মুক্ত করার বাসনা জাগে তার মনে।বাড়ীতে ফিরে আসে সে। খাঁচা খুলে মুক্ত করে বেটুয়াকে।অসুস্ত বেটুয়া প্রথমে বুঝতে পারে না, ধমকে তাকে উড়তে বলে নীল।ধমকে হুস ফিরে বেটুয়ার। দুবার ভেজা ডানায় উড়তে গিয়ে ব্যর্থ হয়। তৃতীয়বারে উড়ে গিয়ে ণীলদের বাড়ীর সামনের গাছে বসে পাখিটি।নীল এক দৃষ্টে চেয়ে থাকে বেটুয়ার পানে।বেশ কিছুক্ষন পর বেটুয়া আবার উড়াল দেয়, এবার অজানার উদ্দেশ্যে মুক্ত আকাশে। নীল হৃদয়ে হারানোর একটা ব্যাথা অনুভব করলেও মনে একটা প্রশান্তি অনুভব করে।