ডেস্ক রিপোর্ট : বাস, ট্রাক, লঞ্চ, বিমান— সর্বত্রই টিকিট সঙ্কট। ঈদ উদযাপন করতে গ্রামমুখী যাত্রীরা টিকিট নিয়ে আছেন উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায়। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রেল, সড়ক, নৌপথ ও আকাশপথে কোথায়ও প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রীরা অগ্রিম টিকিট পাচ্ছেন না। টিকিট নিয়ে ঘরমুখো মানুষরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।

লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট না পেলেও কালোবাজারিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকায় বাস-ট্রেন ও লঞ্চের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। বেশি টাকায় কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট কেটেছেন পাবনার বেড়ার মিরাজুল ইসলাম লালন। তিনি বলেন, কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে যখন চলে আসছিলাম তখন একজন ডেকে বললো ৫০ টাকা বাড়িয়ে দিলে টিকিট পাওয়া যাবে। পরে তাকে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে আল-হামরা গাড়ির একটি টিকিট সংগ্রহ করেছি।
রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চের টিকিটের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আসনের চেয়ে টিকিটের চাহিদা বেশি। এই কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী টিকিট সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বক্তব্য। তবে কালোবাজারিদের ব্যাপারে তারা বলেছেন, অল্প কিছু নানা ধরনের প্রভাবের কারণে হয়ে থাকে। তবে বেশির ভাগই সঠিক নিয়মে হচ্ছে।
টিকিট কিনতে এসে অনেকে অভিযোগ করেছেন, কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী টিকিট মিলছে না। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিক্রি হয়ে গেছে বেশির ভাগ টিকিট। কাঙ্ক্ষিত টিকিট না পেয়ে ফিরে গেছেন অনেক যাত্রী। অনেককে এ কারণে ক্ষোভ প্রকাশও করতে দেখা গেছে।
রেলপথ : রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের জন্য মঙ্গলবারও যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। বিভিন্ন গন্তব্যের সুবিধাজনক সময়ের টিকিট কাটছেন যাত্রীরা। সোমবার কেটেছেন ২৫ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট। রেলের টিকিট কালোবাজারিদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ কালোবাজারিদের ধরতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করছে।
হাজারীবাগের বাসিন্দা সাফায়ের হোসেন বলেন, অনেক চেষ্টা করেও টিকিট পেলাম না। সেহেরি খেয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি; কিন্তু ভাগ্যে টিকিট মিললো না। বলেন, টিকিট নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। টিকিট নিয়ে কালোবাজারি সন্দেহে সোমবার ১৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। পরে ছেড়ে দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন রেলের মহাপরিচালক। প্রকৌশলী তাফাজ্জল হোসেন বলেন, টিকিট চোরাকারবারিদের ধরতে আমাদের তত্পরতা চলছে। যাদের সন্দেহ হচ্ছে তল্লাশি চালাচ্ছি।
সড়কপথ : মহানগরীর বাসটার্মিনালগুলোয় ঘুরে দেখা গেছে, কাউন্টারগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত টিকিট না পেয়ে যাত্রীরা খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ বাসটার্মিনালে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের টিকিট বিক্রি শুরু হয় ১৪ জুলাই ভোর থেকে। এখনও বিভিন্ন কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। ভিড় মাড়িয়ে মানুষ টিকিট সংগ্রহ করছে। যে যেখান থেকে পারছে টিকিট সংগ্রহ করছে।
নৌপথ : দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চের কেবিনের টিকিট এরই মধ্যে বেশির ভাগই বুকিং হয়ে গেছে। লঞ্চ মালিকরা বলছেন, রাজনীতিক, আমলা, পুলিশ, বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল লঞ্চের কেবিনগুলো বুকিং দিয়ে রেখেছেন। লঞ্চের ডেকে আগাম টিকিট বিক্রি করা হয় না। যখন যাত্রা তখনই লঞ্চে ওঠেন যাত্রীরা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার সূত্রে জানা যায়, ২৬ জুলাই থেকে লঞ্চের স্পেশাল ট্রিপ শুরু হবে।
আকাশপথ : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট নিয়ে যাত্রী হয়রানি এখন চরমে। ঘুষ ছাড়া টিকিট কেনা, কনফার্ম ও রিশিডিউল করা যায় না জাতীয় পতাকাবাহী একমাত্র আকাশ পরিবহন সংস্থাটিতে। শুধু তাই নয়, ঘুষ না পেয়ে মহিলা যাত্রীকে মারধর করার মতো নজিরবিহীন ঘটনাও ঘটেছে বিমানে। বিশেষ করে মতিঝিল ও বনানীর বিমান অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা যেন সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। প্রায় প্রতিদিনই এ দুটি অফিসে যাত্রীরা নানাভাবে নাজেহাল হচ্ছেন। বিজনেস ক্লাসের যাত্রীরাও তাদের কাছ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোনো কাজে আসছে না।

(ওএস/এইচআর/জুলাই ২৪, ২০১৪)