আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : নগরীসহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় গত কয়েকদিন ধরে ভোক্তা অধিকার, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ওষুধের ফার্মেসীতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অভিযানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি কিংবা মজুদ রাখায় একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিককে অর্থদন্ড করা হয়েছে। এ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সচেতন মহল। 

তবে অভিযানের মধ্যেও থেমে নেই চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রি। নগরীর অধিকাংশ ওষুধের দোকানগুলোতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই দেদারসে বিক্রি হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। এ তালিকায় সর্দি-জ্বর থেকে শুরু করে ঘুম, নেশা, কিডনী সুরক্ষার ওষুধ ছাড়াও রয়েছে অতিরিক্ত মাত্রার

অ্যান্টিবায়োটিক। বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রি ও সেবনে শুরু মৃত্যুঝুঁকিই বাড়াচ্ছে না, এ কারণে হত্যা, অপহরণ, আত্মহত্যা ও মাদক গ্রহণের মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ। আর বিক্রেতারা বলছেন, চিকিৎসা ফি ও ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসক নির্দেশিত শারীরিক পরীক্ষার খরচ বাঁচাতেই ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ ক্রয় করছেন অধিকাংশ রোগী।

সরেজমিনে নগরীর জেলখানা মোড়, নাজিরেরপুল, মরকখোলার পুল, নতুন বাজার, হাসপাতাল রোড, সদর রোড, শেবাচিম হাসপাতালের সামনে, রূপাতলী, নথুল্লাবাদসহ কয়েকটি স্থানের ফার্মেসিগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, প্রকাশ্যেই চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। আর এসব ওষুধের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-নানা ধরনের ঘুমের ওষুধ। যা সেবন করে উঠতি বয়সের ছেলেরা নেশা করে থাকে। অথচ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধের দোকানগুলোতে ওষুধ বিক্রিতে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কারণ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ সেবনে অ্যাজমা, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য মারাত্মক রোগের রোগীদের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ওষুধের দোকানের বিক্রেতারা জানান, মূলত চিকিৎসা ফি ও ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসক নির্দেশিত শারীরিক পরীক্ষার খরচ বাঁচাতেই ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ ক্রয় করছেন অধিকাংশ রোগীরা। ফার্মেসিগুলোতে যৌণ উত্তেজক, উচ্চ রক্তচাপসহ জটিল সব রোগের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই। বিক্রেতারা অবশ্য ক্রেতাদের ওপর দোষ চাঁপিয়ে বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগী বা তার স্বজনরা ওষুধ ক্রয় করে থাকেন রোগের উপসর্গের বর্ণনা করে।

নগরীর কয়েকটি ওষুধের ফার্মেসিতে দেখা গেছে, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া জ্বরের জন্য ব্যবহৃত কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি হচ্ছে হরহামায়াশেই। এরমধ্যে রয়েছে সিফ্রোফ্লক্সাসিন ৫০০ এমজি ও অ্যামোস্কাসিলিন ৫০০ এমজি। এছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ ডাইক্লোফেনাক ১০০ এমজি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো কিডনী রোগী যদি ডাইক্লোফেনাক ওষুধটি সেবন করেন, তবে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে গজে উঠেছে অসংখ্য ফার্মেসী। যাদের নেই কোন অনুমোদন। অথচ এরা দেদারছে তাদের ইচ্ছেমতো করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সচেতন মহল মনে করছেন, ওষুধ প্রশাসনের কড়া নজরদারী ব্যতীত এসব অবৈধ ফার্মেসীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাই তারা সংশ্লি¬ষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

(টিবি/এসপি/মার্চ ১৫, ২০১৯)