আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের প্রায় একতরফা বর্বর হামলা আজ বৃহস্পতিবার ১৭তম দিনে গড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

আল জাজিরা টেলিভিশনের অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, গাজায় ইসরায়েলি হামলার স্বাধীন তদন্তের পক্ষে ভোট দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল। গতকাল বুধবার জেনেভায় এ ভোটাভুটি হয়।
কাউন্সিলের ৪৭ সদস্যের মধ্যে ২৯ সদস্য তদন্তের পক্ষে ভোট দেয়। অনেক ইউরোপীয় রাষ্ট্রসহ ১৭ সদস্য ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। তদন্তের বিপক্ষে ভোট দেওয়া একমাত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে জাতিসংঘের শীর্ষ মানবাধিকার কর্মকর্তা নাভি পিল্লাই বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনির গাজায় যে হামলা চালাচ্ছে, তাতে দেশটি যুদ্ধাপরাধ করে থাকতে পারে।
এদিকে আজ ভোরে ইসরায়েলি ট্যাংকের হামলায় ১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে একই পরিবারের ছয়জন সদস্য রয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত আহত হয়েছে তিন সহস্রাধিক ব্যক্তি। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। তাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে।

ইসরায়েলের চলমান হামলার প্রেক্ষাপটে এক লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ইসরায়েলের দাবি, গতকাল তাদের তিনজন সেনা নিহত হয়েছে। এ নিয়ে ইসরায়েলের ৩২ জন সেনা এবং তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক তত্পরতা অব্যাহত আছে। গতকাল মিসরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ঈদ উপলক্ষে মানবিক কারণে সপ্তাহান্তে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে।
মানবিক কারণে যুদ্ধবিরতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন হামাস নেতা খালেদ মিশেল। কিন্তু তিনি শর্ত দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির আগে গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ তুলে নিতে হবে।
ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলার সূত্রপাত ৮ জুলাই। ইসরায়েলি তিন কিশোরকে সম্প্রতি অপহরণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই হামলা শুরু হয়। হামাসই ওই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মনে করে ইসরায়েল। তবে হামাস তা অস্বীকার করেছে। পরে ফিলিস্তিনি এক কিশোরকে একইভাবে হত্যা ও অপহরণের পর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। এরপর গাজা থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছে—এমন দাবি তুলে ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ শুরু করে ইসরায়েল।
এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বরে গাজায় অভিযান চালায় ইসরায়েল। তখন আট দিনের মাথায় মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়।
ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে ফিলিস্তিনের দুই অংশ পশ্চিম তীর ও গাজা ২০০৭ সালের আগস্টে চলে যায় দুটি দলের নিয়ন্ত্রণে। সেই থেকে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ফাতাহ পশ্চিম তীরে ও খালেদ মেশালের নেতৃত্বে হামাস গাজা শাসন করছিল। এই অবস্থায় গত এপ্রিলে দুই দলের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী নতুন করে নির্বাচনের পর চলতি বছরের শেষ নাগাদ একটি জাতীয় সরকার গঠনের কথা। কিন্তু হামাস-ফাতাহর চুক্তিকে ভালোভাবে নেয়নি ইসরায়েল। তাদের মতে, হামাস একটি জঙ্গি সংগঠন। হামাস-ফাতাহ জাতীয় ঐক্যের সরকার হলে সেই সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় যাবে না বলে জানিয়ে দেয় ইসরায়েল।
১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের শুরু। এর পর থেকে নিয়মিত রক্ত ঝরলেও আজও তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের স্বাধীন সত্তা মেনে নিতে রাজি নয় ইসরায়েল।
(ওএস/এএস/জুলাই ২৪, ২০১৪)