গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে স্টেশনের বুকিং সহকারি ও স্টেশন মাস্টারের বিরুদ্ধে। স্টেশনের এক বুকিং সহকারি টিকিট বিক্রির ৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে।

আন্তঃনগর ট্রেনের অধিকাংশ টিকিট বিক্রি হচ্ছে কালোবাজারে। আর লোকাল ট্রেনের টিকিটেও স্টেশনের কাউন্টার থেকে কতৃপক্ষ অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় যাত্রীদের। অভিযোগ রয়েছে স্টেশন মাস্টারের যোগসাজশে ২০১৮ সালের চাকরি থেকে অবসর যাওয়ার রেলওয়ে পোর্টার আনিছুর রহমান এখনো সরকারি টিকিট কাউন্টার অফিসে বসে অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট বিক্রি করেন।

অপরদিকের আন্তঃনগর ট্রেনের অ্যাটেনডেন্স ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও টাকা নিয়ে টিকিট ছাড়াই যাত্রীদের ট্রেনে ভ্রমণ করার সুযোগ করে দিচ্ছে। তবে এসব অনিয়ম বন্ধে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেনা।

এ বিষয়ে স্টেশনের রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ইনচার্জ গোলাম মাওলা বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ অনিয়মে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি স্টেশনের বুকিং সহকারি মহসীন রেজার বিরুদ্ধে টিকিট বিক্রির ৭ লাখ টাকা আত্মস্বাৎ করেন। পরের দিন ১ লা মার্চ বিষয়টি জানাজানি হলে মহসীনের পরিবার স্টেশন মাস্টার ও প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে ফেলে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ট্রেনের টিকিট বিক্রির ৭ লাখ টাকা মহসীন ক্রিকেটের মাধ্যমে জুয়া খেলে খরচ করে ফেলেন। এ বিষয়ে মহসীন রেজার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অপরদিকে স্টেশন মাস্টার আব্দুর রশিদ বলেন, টিকিট বিক্রির আত্মস্বাৎকৃত ৭ লাখ টাকা মহসীন ফেরত দিয়েছে। এ ঘটনায় তদন্তটিম গঠন হয়েছে। তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। টাকা আত্মস্বাতের ঘটনায় নিউজ করার দরকার নেই। টাকা আত্মস্বাতের নিউজটা হলে আমার একটু সমস্যা হবে। তবে দ্বিগুণ মূল্যে টিকিট বিক্রির অভিযোগ সত্য নয়। আর আনিছ অফিসে বসে টিকিট বিক্রি করে এমন অভিযোগ সত্য নয়।

জানা গেছে, গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে তিন রুটে প্রতিদিন আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল সহ ৩২টি ট্রেন চলাচল করে। গৌরীপুর থেকে ঢাকার আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট (শোভন) ১৪৫ টাকা হলেও কালোবাজারে তা কিনতে হচ্ছে ২শ ৫০ টাকা থেকে ৩শ টাকা করে। গৌরীপুর থেকে চট্রগ্রামগামী ট্রেনের (শোভন) ৩শ ২০ টাকার টিকিট ৮শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গৌরীপুর থেকে ঢাকাগামী কমিউটার ট্রেন বলাকা এক্সপ্রেস ও মহুয়া এক্সপ্রেস ট্রেনের ৭৫ টাকার ট্রেনের টিকিট কাউন্টার থেকেই ১শ থেকে ২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান ফকির বলেন, টিকিট বিক্রির অনিয়ম বন্ধে আমরা মানববন্ধন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখন অবস্থা এমন যে অতিরিক্ত টাকা ছাড়া আন্তঃনগর ও কমিউটার ট্রেনের টিকিট মিলেনা। কিছুদিন আগে আমার কাছে কাউন্টার থেকে বলাকা ট্রেনের ঢাকার ৭৫ টাকার টিকিট ১৫০ টাকা রাখা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বুকিং সহকারি মহসীন টাকা আত্মস্বাতের ঘটনায় চাকরি থেকে বরখাস্ত হলেও কালোবাজারে টিকিট বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করছেন অপর বুকিং সহকারি জহির রায়হান। অগ্রিম ট্রেনের টিকিট কেটে রেখে তিনি কালোবাজারীদের মাধ্যমে চড়া দামে টিকিট বিক্রি করেন। এরমধ্যে গত শুক্রবার কাউন্টার থেকে একযাত্রীর কাছ থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেনের ৩শ ২০ টাকার টিকিট ৭শ টাকা দাবি করেন জহির। পরে বিষয়টি নিয়ে ওই যাত্রী প্রতিবাদ করলে জহির ওই যাত্রীকে দেখে নেয়ার হুমকি দিলে স্টেশনে হুলুস্থুল কান্ড ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, দুই দিন আগে আমি চট্টগ্রামগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য কাউন্টারে গেলে জহির ভাই বলেন টিকিট নেই। কিন্তু পরে জহির ভাই দ্বিগুণ মূল্যে যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করেন। আমি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো আমার টিকিট না, অন্যের টিকিট আমি বিক্রি করে দিচ্ছি”।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বুকিং সহকারি জহির রায়হান বলেন, টিকিট নিয়ে একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। আমরা বেশি দামে টিকিট বিক্রি করি না।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেন্ড জহুরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আপনি বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলুন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য টিকিট বিক্রির টাকা আত্মস্বাতের ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শফিকুর রহমানের মুঠোফোনে (০১৭১১৬৯১৬৪৩) একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

(এসআইএম/এসপি/মার্চ ২০, ২০১৯)