বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন


আমাদের সড়কে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে। একটার পর একটা মর্মান্তিক ঘটনা। এ ঘটনায় আমি, আপনি যে কেউ - যে কোনো সময় সংবাদ শিরোনাম হতে পারি। সাম্প্রতিক শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনাটি আরো করুণ। এ শিক্ষার্থীর নির্মম মৃত্যু জাতির বিবেক-কে আবারো নাড়িয়ে দিলো।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ ২০১৯) রাজধানীর নর্দ্দায় প্রগতি সরণিতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হন। সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় তার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। তার বাবার নাম আরিফ আহমেদ চৌধুরী।

আবরার নিজেও ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে নিরাপদ সড়ক দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, সেই আন্দোলনে শামিল ছিলেন আবরার আহমেদ চৌধুরীও। গত বছরের ২ আগস্ট দুপুরে প্রোফাইল পিকচারে সংযুক্ত করেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ স্লোগান।

কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের কর্মীকে সড়কেই লাশ হতে হলো! সড়ক আর নিরাপদ হলো না।

সহপাঠীরা রাস্তায় নেমে আসলেন। তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগানসহ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ৮ দফা দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে এক সপ্তাহের ‘নির্দেশনা’ ছুড়ে দিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষর প্রতি। তাদের এই দাবী সস্পূর্ণ যৌক্তিক। যে কোনো বিবেকবান মানুষ শিক্ষার্থীদের এ দাবির সাথে একাত্বতা প্রকাশ করবেন।

এই অনাকাঙ্খিত সড়ক দুর্ঘটনার মৃত্যু কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলেই আন্দোন শুরু হয়। কিছুদিন অতিব্যস্ত থাকে প্রশাসনের লোকজনের মাঝে। গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা-নীরিক্ষা, ট্রাফিক আইন বা ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে জনগণকে সচেতনতাসহ নানা কর্মসূচি। তারপর এক সময় এ কার্যক্রমগুলো অবহেলার আবরণে ঢাকা পড়ে। এই সুযোগে গাড়ি চালকরা বেপরোয়া হয়। মুহুর্তে গাড়ির চাকায় পিষ্ট করে মূল্যবান জীবন।

জানা যায়, ওই সুপ্রভাত পরিবহনের ঘাতক বাসচালক সিরাজুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। সে নাকি মাদকাসক্ত ছিল। আমাদের ভাবতে চরম অবাক লাগে - একজন গাড়ির চালক মাদকাসক্ত হয় কিভাবে?

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে অন্য জায়গায়। ধরুন- পরিবহন সেক্টরের প্রতি আপনার বিশেষ আকর্ষণ বা দুর্বলতা থাকার কারণে আপনি দশ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি গাড়ি কিনলেন। এখন তো চালকের প্রয়োজন। তাই, আপনাকে স্বাভাবিকভাবেই চালক বা ড্রাইভার অনুসন্ধান করতে হবে। আপনি প্রথমেই খুঁজবেন যে- একজন ভালো ড্রাইভার।

তাহলে ভালো ড্রাইভারের সংজ্ঞা কি? যার নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ বৈধ কাগজপত্র আপ-টু-ডেট রয়েছে। যে কিছুটা পড়ালেখা জ্ঞানসম্পন্ন। যে মদ, গাঁজা, ইয়াবা প্রভৃতি মাদকে আসক্ত নয়। তাই তো?

তাহলে আজই আপনার গাড়ি নামক মূল্যবান সম্পদটির দায়িত্ব যার কাছে হস্তান্তর করেছেন তাকে ভালো করে পরীক্ষা করুন বা তার সম্পর্কে খোজখবর রাখুন – সে মাদকাসক্ত কি না? কারণ, সে মাদকে জড়িয়ে নিজেই শুধু অপরাধ করছে না; তার এই চৌচক্রযান সম্পর্কিত অপরাধের সাথে ফেসে যাচ্ছেন আপনিও।

তাই, সময় থাকতে মাদকাসক্ত ড্রাইভারদের ছাটাই করে নিজেকে সম্ভাব্য সকল ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখুন। বাঁচতে দিন একেক-জন শিক্ষার্থীর মহামূল্যবান জীবন। হাসতে দিন এক-একটি পরিবারের চলমান খন্ড খন্ড হাসিগুলোকে।

লেখক : সাংবাদিক ও আবৃত্তিশিল্পী।