মকিস মনসুর আহমদ, যুক্তরাজ্য থেকে : “বিএনপি জোট তাদের ব্যর্থতার আগুনে সবাইকে পোড়াতে চাচ্ছে। আল্লাহর রহমতে পারবে না- আমি আপনাদের কথা দিয়ে যাচ্ছি। কোনো দল যদি নির্বাচন না করে আর মনে করে যে নির্বাচন ঠেকাবে; ঠেকাতেও যদি ব্যর্থ হয়, আন্দোলন করতেও যদি ব্যর্থ হয় সে দায় তো বাংলাদেশের জনগণের না। সে দায় তো আমাদের না। ”লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোটের দিকে ইঙ্গিত করে উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন।

মঙ্গলবার লন্ডনের হিলটন হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে ইফতারপূর্ব এক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “হরতাল, খুন, বাস পোড়ানো, ট্রেন পোড়ানো, কুরআর শরিফ পোড়ানো, মসজিদে আগুন দেয়া, বাসে আগুন দেয়া, গাছ কাটা, রাস্তা কাটা এ হেন অপকর্ম নাই, নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি-জামায়াত করে নাই। কিন্তু জনগণ তাদের আহ্বানে সাড়া দেয় নাই।”
তিনি বলেন, “শুধু তাই নয়, তারা প্রিজাইডিং অফিসারকে খুন করেছে। তারপরও নির্বাচন হয়েছে, ৪০ ভাগ মানুষ ভোট দিয়েছে। সেজন্য আমি বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা উন্নয়নমূলক যে কাজগুলো করে যাচ্ছি, সেগুলো বাস্তবায়নের একটা সুযোগ পেয়েছি। ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত যে উন্নয়ন করেছিলাম, সেগুলো তারা নষ্ট করে দিয়েছিল।”
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “পদ্মা সেতু নিয়ে একটা চরম ষড়যন্ত্র হয়েছে; আপনারা জানেন যে কারা ষড়যন্ত্র করেছিল। আল্লাহর রহমতে নিজেদের অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।” দেশকে পিছিয়ে দিতে ‘মহলবিশেষের’ ষড়যন্ত্রের বিষয়ে প্রবাসীদের সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
বৃটেনে প্রবাসীদের সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, “ইতিমধ্যে আমি বৃটিশ সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। ভিসার সমস্যা যাতে না হয় তারা সেটা দেখবেন। আজকে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে যে সহায়তা তারা দেন সেটা অব্যাহত রাখবেন।”
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত ইফতার পার্টিতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ শরীফ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুকসহ দলের নেতাকর্মীরা ইফতারে যোগ দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী, বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলসহ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরাও ইফতারে অংশ নেন।
অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির ‘ভূয়ষী প্রশংসা’ করে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
ডেভিড ক্যামেরন গভীর আশা প্রকাশ করে বলেছেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তারা বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে যাবে।
বুধবার সকালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দ্বি-পাক্ষিক বিষয় নিয়ে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে যুক্তরাজ্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “অব্যাহত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং নারীর স্বাধীনতা ও অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে তার ভূয়ষী প্রশংসা করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।”
“তিনি (ক্যামেরন) বলেছেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ অনেক দিনের বন্ধু। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে যে সহযোগিতা করে যাচ্ছে তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।”
ডেভিড ক্যামেরনের আমন্ত্রণে গার্ল সামিটে যোগ দিতে তিনদিনের সফরে সোমবার লন্ডন এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর যুক্তরাজ্যে এটাই তাঁর প্রথম সফর।
সোমবার দুপুরে গার্ল সামিটে যোগ দেয়ার আগেই সকাল সাড়ে আটটা থেকে আধাঘন্টারও বেশি সময় বৈঠক করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, “বৈঠক খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে হয়েছে এবং দুই নেতাই খুব ঘনিষ্টভাবে আলোচনা করেছেন। ডেভিড ক্যামেরন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ভূয়শী প্রসংশা করেছেন।
বিশেষ করে এমডিজির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অর্জন এবং প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে তার ভূয়শী প্রসংশা করেছেন এবং সেজন্যই তিনি গার্ল সামিটে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।”
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “ডেভিড ক্যামেরন গভীর আশা প্রকাশ করে বলেছেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তারা বাংরাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে যাবেন।
বৈঠকে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি ক্যামেরন সরকারের আস্থার প্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র সচিব।
“শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি গভীর আস্থার প্রকাশ ঘটেছে। শুধু প্রশংসা করেছেন তাই না, সরকারের প্রতি গভীর আস্থা প্রকাশ করেছেন এবং শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছেন।”
“একইসাথে ক্যামেরন বাংলাদেশ সফরেরও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সিলেটে তিনি যেতে চেয়েছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন যে, বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার অত্যন্ত আন্তরিকভাবে তাকে স্বাগত জানাবে।
বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার জন্য বৈঠকে ক্যামেরনই প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জানিয়ে শহীদুল হক জানান, “তিনি বলেছেন যে, আমি এটা দেখতে চাই নারীর উন্নয়ন, অব্যাহত ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এটা আপনারা কিভাবে করলেন আমি সরেজমিনে দেখতে চাই।
আমি এটাও দেখতে চাই যে, আপনারা মৌলবাদী শক্তির চ্যালেঞ্জকে কিভাবে মোকাবেলা করছেন। এজন্যও ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রীর ভূয়শী প্রসংশা করেছেন। ক্যামেরন বলেন,এটা খুব কঠিন চ্যালেঞ্জ, উনি যেটা করে যাচ্ছেন এতদিন ধরে।”
দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রী গার্ল সামিটে যোগ দেন। গার্ল সামিটের ভেনুতে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়েন এবং ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক এন্থনি লেক।

(এএস/জুলাই ২৪, ২০১৪)