সঞ্জীব কুমার দাস, কাপাসিয়া (গাজীপুর) : কাপাসিয়ার সিংহশ্রী ইউনিয়নের প্রোটিন হাউজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে স্থানীয় কৃষকদের আবাদী ধানের জমি জবরদখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সংঘর্ষে এলাকার নিরীহ ৭জন গ্রামবাসী  গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদেরকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। 

ঘটনার পর এলাকায় এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করছে। প্রোটিন হাউজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে এলাকার সাধারণ মানুষ ফুসে উঠেছে। যে কোন মুহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংখা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ওই এলাকার কৃষক মোঃ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে কাপাসিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে এখনো প্রোটিন হাউজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পুলিশ। বরং উল্টো গ্রামবাসীদেরকে পুলিশ মামলার ভয় দেখিয়ে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সিংহশ্রী ইউনিয়নের কপালেশ্বর গ্রামের কৃষি জমিতে গ্রামবাসীর জমিতে জোড় করে জমি দখল করে প্রোটিন হাউজ লিমিটেড নামে একটি লেয়ার মোরগের ফার্ম গড়ে উঠেছে। আনুমানিক ৫০ বিঘা জমির উপর নির্মিত এ ফার্মের চারপাশে এখনো কয়েকশত একর কৃষি জমি রয়েছে । প্রোটিন হাউজ লিমিটেডের হাইজের মুরগীর সকল বর্জ্য প্রতিদিন গ্রাম বাসীর কৃষি জমিতে ফেলা হচ্ছে।

স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, প্রায় ৭/৮ বছর আগে গড়ে তোলা এ ফার্মের মালিক পক্ষের লোকজন তাদের ব্যবসায়িক কলেবর বাড়ানোর জন্যে প্রায়ই চারপাশের কৃষকদের থেকে জমি কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিয়ে থাকে। এতে জমির মালিকরা রাজি না হলে বিভিন্ন এলাকা থেকে মাটি এনে ফার্মের জমির সীমানায় তা মজুদ করে রাখে। পরে রাতের আধারে প্রোটিন হাউজ লিমিটেডের ভাড়া করা সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ভেকু দিয়ে জোরপূর্বক মাটি কৃষি জমিতে ফেলে তা দখল করে নেয় ।

স্থানীয় নামিলা গ্রামের মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, সিংহশ্রী মৌজাস্থিত ৪৫৪ নং খতিয়ানের এস এ ৪৩৬৭ নং দাগের ৪৭ শতাংশ পৈত্রিক শাইল জমিতে বর্তমান মৌসুমে তিনি বোরো ধানের আবাদ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে প্রোটিন হাউজের খাড়া করা সন্ত্রাসীরা টিনের ভেড়া দিয়ে তার ফসলি জমিটি মাটি দিয়ে ভরাট করে নেয়। খবর পেয়ে এলাকার কয়েকশত গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ সময় উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় হয়্ এ সময়সন্ত্রাসীদের হাতে অন্তত সাতজন গ্রামবাসী আহত হয়।

আহতরা হলো নজরুলের ভাই সিরাজুল ইসলাম, বেলায়েত মেম্বার, সোহেল রানা, শামীম, মিলন, ইমরান শেখ ও আরমান শেখ। তাদেরকে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। খবর পেয়ে রাতের কাপাসিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং কৃষি জমির চারপাশ থেকে টিনের বেড়া ও খুঁটি সড়িয়ে ফেলার নির্দেশ প্রদান করে।

পরে নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে প্রোটিন হাউজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ কায়ছার আহাম্মেদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান, ম্যানেজার নূরুজ্জামান ও আঃ রউফসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে আসামী করে কাপাসিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। নজরুল ইসলাম আরো জানান, একই গ্রামের হেলাল মাস্টার ও গণি সরদারের জমিও প্রোটিন হাউজের লোকজন একইভাবে রাতের আঁধারে দখল করে নেয়ার জন্যে তাদের জমি ঘেঁষে বিশাল মাটির স্তুপ দিয়ে রেখেছে। এ ভূমিদস্যুদের হাত থেকে ফসলি জমি রক্ষার ব্যাপারে তারা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে প্রোটিন হাউজ লিমিটেডের কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চাইলে সাংবাদিকদের সাথে তারা কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে ।

এ ব্যাপারে কাপাসিয়া থানার ডিউটি অফিসার জানান, অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রয়োনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(এসকেডি/এসপি/মার্চ ২২, ২০১৯)