মুহাম্মদ সেলিম হক : ইন্দোনেশিয়ায়! পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মুসলিমদের বসবাস। বাংলাদেশের চেয়ে আটগুন বড় এদেশে মুসলিমের সংখ্যা প্রায় ২৬ কোটির কাছাকাছি। তবে বালি দ্বীপে মুসলিম খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর। বালির অলিতে গলিতে প্রতি কদমে কদমে পড়বে দেবতাদের ভাস্কার্য্য ও মূর্তি দেখা যায়।

২০১০ সালের আদমশুমারির রির্পোটের তথ্য মতো জানা যায়, বালিতে ৮৭% হিন্দু ধর্মের মানুষের বসবাস। বাকিরা হলো মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য স্ব স্ব ধর্মীয় জাতের মান্ষু। বালিতে আসার আগে আমার সফর সঙ্গী সমীর বাবুর বিশ্বাস করতে পারেনি ইন্দোনেশিয়া হিন্দু আছে।

নেটে তথ্য দেখে দারুন খুশি সমীর বাবু। কারণ তাদের ৩৩ হাজার কোটি দেবতা। হয়তো কোন না কোন দেবতাকে পাওয়া যাবে পূজা দেয়ার জন্য। আগের বার নেপালে গিয়ে কিছু দেবতার মিল পায়। তবে কিছু মন্দিরে প্রবেশ করেনি পূজা ও দেয়নি। কারণ তারা নাকি হনুমানকে পূজা দেয় না। যদিও জাত ধর্ম বিভেদে যত নিয়ম আর বিধি নিষেধ রয়েছে তাদের।

তবে এবার বালিতে সমীর বাবুর চাহিদা মতো দেবতা মিলল, প্জূার ধরণ ও দেবতার চেহারা ছিলো ভিন্ন। এখানকার দেবতার বড় বড় চোখ আর দাতঁ। যা আরব্য উপন্যাসে আমরা দেখেছি টিভিতে। তবে গণেশের আকৃতি ঠিক আমাদের দেশে থাকা হিন্দুদের মতো। তবে পূজার পসরা ও ভিন্ন।

এরা সকালে প্রতিটি দোকান আর হোটেলে আর বাড়ির সামনে একটা নারকেল গাছের পাতার থালায় ফুল, আগরবাতি, বিস্কুট ও ঘাস দিয়ে দেবতার মন জয় করার চেষ্টা করে। আর কপালে লাগাবে কয়েকটি চাউল।

জানা যায়, পুরো বালি প্রদেশে মন্দির রয়েছে ১লাখ ২৫ হাজারের মতো। এ জন্য বালিকে দেবতার শহরও বলা হয়। তবে এখানকার মন্দিরের ভেতর দেবতার মূর্তি তেমন নেই। যত সব বাহিরে।

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুর মতো নয়। দেবতার নাম ঠিক কিন্তু পূজার আয়োজন ভিন্ন দেখে সমীর বাবু অনেকটা খড়কা পড়ে গেলো। এরা মানে গনেশ, কৃষ্ণ, স্বরস্বতী, বিষু, মহিষুর আরো কত দেবতা।

ভারতীয় সাংস্কৃতিক বলয়ে বালিতে হিন্দুদের প্রবেশ ঘটলো সময়ের পরিবর্তনে এরা বদলে যায়। এদের ধর্মের অনেকটা চায়নাদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এরা দূর্গার নাম জানে তবে দূর্গা পূজা করে না। প্রতিদিনের বেড়ানোর ফাঁকে গাড়িতে গাড়িতে চলতে চলতে ড্রাইভারের সাথে আলোচনায় সমীর বাবু জানতে চাইলো তাদের বড় উৎসব কি?

গুষ্টি টেডু নামে একজন জানালো তাদের বড় উৎসব,, "সাইলেন ডে," সমীরবাবু নড়ে চড়ে বসে গভীরভাবে জানতে চাইলো এটা আবার কী হিন্দু ধর্মে। এটা নাকি মার্চের প্রথম সপ্তাহে হয়। এ দিন বালিতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরের দিন ৬টায় পর্যন্ত কোন শব্দ নেই। কেউ রাস্তায় বের হয় না। গাড়ি চলে না। খোলা হয় না দোকান। সবাই বাড়িতে বসে প্রার্থানা করে। কেউ লাইট জ্বালাতে পারবে না। একেবারে অন্ধকার। খাবারও খাওয়া যাবেনা। এক প্রকার উপোস।

এক ধাপ বাড়িয়ে গুষ্ঠি বললো এ দিন বালিতে বিমান উঠানামা করেনা। একেবারে চমকে উঠার কথা। পৃথিবীতে কোথাও বিমানের উঠা নামে বন্ধ হয় কিনা জানি না। কোন কারণ বা কোন দূর্ঘটনা ছাড়া। তবে আমাদের উৎসবের মতো এরা নতুন কাপড় কেউ কিনে না। কেউ বালিতে আসেনা। পুরো বালি থাকে অন্ধকারে আচ্ছন্ন।

এ যেনো এক অদ্ভুদ পুজা! এরা হিন্দু হলেও এদের মেয়েরা পড়েনা শাঁখা আর সিদুঁর। অনেকটা স্মার্ট হিন্দু! পাঠাঁ বলি দেয়ার প্রচলন নেই তবে এরাও মহিষ খায় না।নেপালের হিন্দুরা মহিষ খেত। মন্দিরের নিমার্ণ শৈলীটা ভিন্ন। মন্দিরের উপরে একটা ছাতা থাকবে। এমনি প্রবেশে বাধা নেই। তবে নামকরা মন্দির গুলোতে পূজার জিনিস ছাড়া প্রবেশ করা যায় না।

তবে বালি লোকদের কালচার দেখে বুঝার উপায় নেই এরা হিন্দু। দেবতার প্রতি তাদের কত অগাধ বিশ্বাস তা শহরের চলার পথে চোখে পড়বে।

কেন্দ্রীয় সরকার মুসলিম হলেও এদের ধর্মীয় কাজে সরকার হস্তক্ষেপ করেন না। মুসলিম প্রধান দেশে এরা কত স্বাধীন তা বালিতে গেলে বুঝা যায়। ধর্ম নিয়ে নেই বাড়াবাড়ি।

সম্প্রদায়ের বন্ধনে কত শান্তি বালিতে। চকচকে শহর সাঁজানো গোছানো। দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাবেন না কোন ময়লা আবর্জনা। প্রকৃতির প্রতিদান এরা দিতে কার্পন্য করেনি। তাদের চেয়ে আমরা কত পিছিয়ে রয়েছি।

শহরে আকাশের বড় মাথা নিয়ে উচু করে দাড়িয়ে রয়েছে শিবের স্টায়ার্চু। সমীর বাবু দেবতার চেহারায় ভিন্নতার কারণে চিনতে পারেনি এটা শিবের মূর্তি। পরে জেনে আপসোস থেকে গেল তার। কাছে গিয়েও প্রনাম করতে পারেন নি বলে।

দেখা অদেখার মাঝে চলছে। বালির পথে প্রান্তে কাটছে আমাদের সময়ও। তবে আমি সহজে খুঁজে পাইনি কোন মসজিদ। তবে শুনেনি আজানের ধ্বনি। সুযোগ পেলেই নামাজ আদায় করছি।

চলবে

লেখক :সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও সংগঠক কর্ণফুলী, চট্টগ্রাম।