সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : ঘড়ির কাঁটায় তখন সময় দুপুর ১২ টা । কলেজ মাঠে বসেছে গরু- ছাগল আর কাঠের তৈরি খাট চৌকির হাট । কলেজে গিয়ে দেখা যায় ছাত্র শিক্ষক কেউই নেই । আছে শুধু অধ্যক্ষের রুমটি খোলা । বৃহস্পতিবারের (২১ মার্চ) এ চিত্র সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজের । এমনটি চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে ।

কথা হয় কলেজের পিয়ন রমা নাথের সাথে । তিনি বলেন কলেজ মাঠে সাপ্তাহিক হাট বসায় কোন বৃহস্পতিবারেই স্যাররা ( শিক্ষকেরা) ঠিক মতো আসেন না । এ কারণে ছাত্র-ছাত্রীরাও আসেনা ।আমরা শুধু অফিস খোলা রাখি ।

নওগাঁ হাটটি সিরাজ জেলার ঐতিহ্যবাহী হাটগুলোর মধ্যে অন্যতম । হাটটি অবস্থান সিরাজগঞ্জ,পাবনা ও নাটোর জেলার সীমানাবর্তী হওয়ায় সঙ্গত কারণেই ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিও একটু বেশি । গত ১৮ এপ্রিল ২০১৮ ইং সালে তাড়াশ উপজেলা প্রশাসনের সাথে নওগাঁ হাট ইজারা কমিটির সম্পাদিত এক চুক্তিনামা থেকে জানা যায়, এক কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্বে এক বছরের জন্য হাটটি ইজারা দেয়া হয় । চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইজারাদার হাট সীমানার বাইরে কোন প্রকার হাট লাগানো বা টোল আদায় করতে পারবেন না । এ ছাড়াও ইজারাদার নিজ খরচে হাট পরিষ্কার রাখবেন । কিন্তু বাস্তবে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র ।তারা রীতিমতো হাট সীমানার বাইরে কলেজ মাঠে হাট বসিয়ে টোল আদায় করছেন ।

এ প্রসঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষ খন্দকার আবু সাঈদ জানান, তিনি কলেজটির অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন । কলেজ মাঠে হাট লাগার কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘিœত হওয়ায় তারা বৃহস্পতিবার কলেজে আসেনা । সে কারণে বেশিরভাগ শিক্ষকই অনুপস্থিত থাকেন । বিষয়টি তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অপরদিকে ইজারাদাররা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তারা কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না ।

নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ মাঠেই নির্মিত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর পলাশডাঙা যুব শিবিরের স্মৃতি স্তম্ভ এবং নির্মাণাধীন রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়ণে একটি মুক্তিয্দ্ধু জাদুঘর । কিন্তু এমন একটি পবিত্রতম স্থাপনার সামনে হাট বসায় জায়গাটি প্রায় সময়ই থাকে অপরিচ্ছন্ন । আগ্রহী দর্শনার্থীরা এসে এ চিত্র দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যান । তাড়াশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার গাজী আরশেদ আলী তাই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, প্রশাসনের প্রতি দাবী অবিলম্বে কলেজ মাঠে হাট বসানো বন্ধ করা হোক ।

কলেজে হাট লাগানো প্রসঙ্গে ইজারা গ্রহীতা মো: আলহাজ উদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,অনেক আগে থেকেই কলেজ মাঠে হাট বসে আসছে । আমরা ইজারা নেয়ার পর থেকে সেই মোতাবেক প্রশাসন কে ম্যানেজ করেই কলেজ মাঠে বসানো হয় । উপজেলা প্রশাসন আমাদের না করে দিলে আমরা এখান থেকে সরিয়ে নিবো ।

মুঠোফোনে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা জানায়, হাটের কারণে তারা বৃহস্পতিবার কলেজে যায় না । শুধুমাত্র হাটের জন্য বছরে প্রায় ৫০ দিন ক্লাস বন্ধ থাকায় তাদের পড়ালেখার মান খারাপ হচ্ছে ।

প্রসঙ্গটি নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনভাবেই হাট-বাজার বসতে পারে না । আমি দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো ।

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফফাত জাহান বলেন, হাট পেরিফেরি এলাকার বাইরে কোন হাট বাজার বসিয়ে টোল আদায় করা যাবে না । আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনার প্রশ্নই ওঠে না । দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে ।

(এমএস/এসপি/মার্চ ২৩, ২০১৯)