মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলির কথা

৭১এ মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলির কথা কোন দিন ভুলতে পারব না
মুক্তিযুদ্ধের কামানের বিকট শব্দ আজও আমার কানে ভেসে আসে
আর তখনই মনে হয় পাকসেনাদের বরবর অত্যাচারের কথা
মুক্তি ও মিত্র বাহিনী সেদিন জোট বেঁেধছিল
পাক হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুর থাবা থেকে বাঙালী জাতিকে মুক্ত করতে
সেজন্যে তারা নেমেছিল সম্মুখ যুদ্ধে
আর শপথ নিয়েছিলেন জীবন দিয়ে হলেও কিছুতেই হারবেননা তারা
হয়েছেও তাই-ই।
সে সময় আমাদের বাড়ির সামনের খালে হাটু পানি
নৌকাও চলে আবার হেটেও পার হওয়া যায়
একদিন দক্ষিনপাড়ার লোকজন দৌঁড়াদৌড়ি করে আসছে
আর বিষাদময় ছায়ামুখে বলছেন কি সর্বনাশ হইলো গো
দু’চোখ দিয়ে চেয়ে দেখার মতো না।
এর কারণ কি জানেন ?
এর কারন হলো সেই পাড়ার সুন্দরী এক হিন্দু যুবতীকে
পাখির বাচ্চার মতো ধরে নিয়ে গিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর
হাতে তুলে দিয়েছে স্থানীয় কুখ্যাত এক রাজাকার
জেনেছি যুবতীটি সেদিন তার সম্ভ্রম বাঁচাতে
নিজেই নিজের শরীরে ও মুখে কালি মেখে সুন্দর্য্য নষ্ট করেছিল
লুকিয়েছিল বাড়ির পাশেই একটি হলুদ ক্ষেতে
তখন বর্ষাকালে বাড়ির পাশে হলুদ গাছ অনেক বড় হতো
কিন্তু পাক বাহিনীর লোকেরা জানতোও না চিনতোও না ওই যুবতীকে
স্থানীয় রাজাকার তার প্রমোশনের জন্য ওই যুবতীকে ধরে নিয়ে
পাক বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে তাদের খুশি করেছে
এর পর গ্রামে সব নারী পুরুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে
পাক বাহিনী ওই যুবতীকে কেন্দুয়া থানায় নিয়ে গেল
সেখানে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমোদ ফুর্তি করে তার দেহটাকে ভোগ করল
পায়ে ধরে অনেক আকুতি মিনতি করেও সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারেনি ওই যুবতী
রাজাকার ও পাক সেনারা হা হা করে হাসছে
আর ওই যুবতীকে কুত্তার মতো উপভোগ করেছে।
ক্লান্ত শ্রান্ত দেহ নিয়ে কয়েকদিন পর ওই যুবতী ফিরে এলো বাড়িতে
এসে দেখে তার পরিবারের সবাই চলে গেছেন মহেশখলায়
পরে অন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি যান তার মা বাবার কাছে
এভাবে মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে অনেক ঘটনা ঘটেছে
আমরা মাকে নিয়ে বাঁচবার জন্য সব ভাই বোন
খালপাড়ায় একটি বাড়িতে আশ্রয় নিতাম
পাক বাহিনী এলেই দৌঁড়ে সে বাড়িতে চলে যেতাম
তারা মুসলিম হলেও আমাদের বাঁচাতে অনেক চেষ্টা করেছেন
একদিন মাকে নিয়ে খাল পাড় হবার সহয় মা পানিতে ডুবে গেছে
আসলে মা সাঁতার জানতেন না
তখন আমরা সব ভাই কোন মিলে মাকে কোলে তুলে পাড়ে ওঠালাম
যুদ্ধ চলছে এবাড়ি ওবাড়ি পালিয়ে পালিয়ে কয়েক মাস কেটে গেল
হঠাৎ একদিন সকালে দলে দলে লোকজন ছুটে চলছে দক্ষিন পাড়ার দিকে
সবার মুখে হাসির ঝিলিক, আমি তাদের সঙ্গি হয়ে গেলাম
গিয়ে দেখি মাটিতে পরে আছে সেই রাজাকারের লাশ
মুক্তিযোদ্ধারা তাকে গুলি করে শেষ করে দিয়েছে
বুকের বাম পাশে একটি ছোট্ট গুলির ছিদ্র
কিন্তু পেছন দিক উল্টালে দেখা যায় অনেক বড়
নারী পুরষ ভীড় করে দেখছে আর বলছেন
মুক্তিযোদ্ধারা খুব ভালো কাজ করেছেন
শালা কুত্তার বাচ্চা রাজাকারকে গুলি করে মেরেছে।
কিন্তু সেই রাজাকারের দৃশ্যটি সেই যুবতী ও তার পরিবার
মহেশখলায় থাকায় আর দেখতে পারেনি, পরে এসে শুনেছে
এভাবেই কেটেছে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি।