চৌধুরী আবদুল হান্নান


একটি ব্যাংকের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনের দায়িত্ব ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের। সরকারি ব্যাংকের পর্ষদের পরিচালকগণ সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং তাঁরা ব্যাংকের মালিক নন, মালিকের প্রতিনিধি। আর বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকগণ ব্যাংকটিতে তাঁদের শেয়ার অনুযায়ী ব্যাংকের মালিকও।

পর্ষদ সদস্যরা বচ্যাংকের দৈনন্দিন কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন না, হস্তক্ষেপও করার কথা নয়। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো খেলাপি ব্যাংকের পরিচালক থাকতে পারেন না। তবে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে অনেকে পরিচালক পদে বহাল আছেন। আইন প্রয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের শৈথিল্য এবং নানা ফন্দিফিকিরের মাধ্যমে এমন অনেকেই পরিচালক পদ দখল করে আছেন। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এক পরিচালক তো কেবল ঋণ খেলাপিই নন, প্রতারণা-জালিয়াতি মামলার আসামিও। এ সকল তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, ব্যাংক পরিচালকরাই চার হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি (সমকাল, ৫-৩-১৮)।

যারা বড় ঋণ খেলাপি তাদের বেশির ভাগই আদালতে রিট করেন। রিটের মাধ্যমে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পাওয়া গেলে, ঋণ খেলাপিকে আর খেলাপি যাবে না। তখন আর ব্যাংকের পরিচালক থাকতেও বাধা নেই, ব্যাংক থেকে নতুন সুবিধা পেতেও বাধা থাকে না।

দীর্ঘদিন মামলা চলার পর আদালতের রায় ব্যাংকের পক্ষে গেলে বেশিরভাগ ক্ষত্রে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিচ্ছেন গ্রাহক। এমন দীর্ঘ সূত্রতায় এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা ২ লাখ ২১ হাজার মামলা ঝুলে আছে যার বিপরীতে খেলাপি ঋণের পরিমান প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা।

রিট মামলার রায় খেলাপিদের পক্ষে যায় কীভাবে? এখানে মূলত দু’টি পক্ষ, রিট আবেদনকারী ও ব্যাংক। দু’পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায় দেন। প্রথম পক্ষ অঢেল অর্থ ব্যয়ে ইচ্ছে মত দক্ষ আইনজীবী, ব্যরিষ্টার নিয়োগ দিতে পারেন কিন্তু ব্যাংকের কৌশলী বিধি মোতাবেক নির্দিষ্ট হারে ফি পেয়ে থাকেন, বাড়তি খরচ করার সুযোগ নেই। এখানেও অর্থের দাপট। তথ্য-উপাত্তসহ বাকযুদ্ধে যদি এক পক্ষ দুর্বল থাকে, তা হলে আদালতের ভিন্ন কিছু করার থাকে না। আর ব্যাংক হেরে গেলে ব্যাংকের প্রতিনিধি বা কৌশলীর ব্যাক্তিগতভাবে কিছু যায় আসে না, কারণ ব্যাংকের অর্থ তো দরিয়ার মাল। তাছাড়া যদি ইঁদুর ও বিড়ালে বন্ধুত্ব হয়ে যায়, আর যদি নন্দন কাননে তাদের গোপন মিলন ঘটে, তা হলে তো কথাই নেই। রাষ্ট্রের অর্থ ভান্ডার জিম্মাদারের দায়িত্ব থেকে যদি অসৎ ও লোভী ব্যক্তিদের বিতাড়ন করা না যায় তা হলে ব্যাংক খাতের দুর্দশা লাঘব হবে কীভাবে?

তবে সম্প্রতি মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, “ ব্যাংকের পর্ষদ কোনো খেলার জায়গা নয়, যে কাউকেই আর পরিচালক বানানো হবে না।” তাঁর এ খতায় আশার আলো আছে, আমরা আশাবাদী হতে চাই। কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা ভিন্ন, আশার আলো কেবল আঁধারে মিলিয়ে যায়।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।