প্রবীর সিকদার


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেরানি আবজাল হোসেন রঞ্জন বহু পুরনো লুটেরা! তার হিমালয় সমান অর্থ-সম্পদের গল্প শুনছি অনেকদিন; তার লুটপাটের কাহিনী লিখতে মন চায়নি কখনো, এমন রঞ্জন তো এই দেশে কম নেই! কিন্তু আবজাল হোসেন রঞ্জন যখন মন্ত্রীর নির্বাচনী ফাণ্ডে টাকা ঢেলে সমাবেশে প্রধান অতিথি বিশেষ অতিথি হওয়া শুরু করলেন, কিংবা বস্তা বস্তা টাকা ঢেলে চোর-ডাকাতকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বর বানাতে শুরু করলেন, তখন আর বসে থাকি কী করে!

চোর থাকবে চোরের মতোই আড়ালে আবডালে! চোর যখন নেতা হওয়ার খায়েশ পূরণে মরিয়া হন, তখন যে তাকে আর রক্ষা করা সম্ভব হয় না, এটা তো একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ফাঁসির রায় এবং ওই রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে। একাত্তরের রাজাকার নিজামি মুজাহিদ মীর কাসেম কামারুজ্জামান কাদের মোল্লারা যদি নেতা মন্ত্রী না হয়ে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চোরের মতো আড়ালে আবডালে থাকতেন, তাহলে ইতিহাস অন্য রকমও হতে পারতো! ঠিক তেমনি আবজাল হোসেন রঞ্জন যদি লুটপাটের টাকায় নেতাগিরি না ফলিয়ে চোরের মতো আড়ালে আবডালে থাকতেন, সেই ক্ষেত্রে আমি হয়তো তার লুটপাট নিয়ে লিখতেই যেতাম না। যারা আবজাল ও তার স্ত্রী রুবিনার কঠিন পরিণতির জন্য আমাকে দায়ী করেন, তাদেরকে বলছি অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষাতেই, অপরাধী যতো পাকাই হোক না কেন, অপরাধ সংঘটনের সময় কিংবা আগে-পরে অপরাধী একটা না একটা ক্লু ফেলেই যাবে! আবজাল হোসেন রঞ্জনকে আমি ধরতে যাবো কেন, সে তো নিজেই মন্ত্রীর পাশের চেয়ারে বসে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হয়ে আজকের এই কঠিন পরিস্থিতিকে সাদরে ডেকে এনেছেন!


আবজাল হোসেন রঞ্জনকে ফাঁসানোর দোষ আমার নয়, সেটা বাঙালিরই চারিত্রিক দোষ কিংবা গুণ! বাঙালি সব অপরাধীকেই ক্ষমা করতে পারে, কিন্তু যারা অপরাধী হয়েও দম্ভ করেন কিংবা দম্ভ প্রচারে মরিয়া হন, বাঙালি তাদেরকে ক্ষমা করেন না; তাদেরকে ফাঁসিয়ে তবে শান্ত হন। আবজাল হোসেন রঞ্জন যে নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই ফেঁসেছেন, সেই সত্য সকলকে অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে।

সবশেষে এটাও দৃঢ়চিত্তে বলে রাখছি, ক্ষমতার দম্ভে মাতোয়ারা ফরিদপুরের লুটেরা-দুর্বৃত্তদের কপালে আবজাল হোসেন রঞ্জনের হুবহু কপাল লিখনই লেখা হচ্ছে; সময়ে মিলিয়ে নিবেন।