স্বাস্থ্য ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের আগেই সবার হাতে হাতে পৌঁছে গেছে। এছাড়া পরীক্ষায় অনিয়মসহ স্বজনপ্রীতি হয়েছে—এমন অভিযোগে গত কয়েকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নেতাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনা করে। এতে চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে বেড়েছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা।

নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের অভিযোগ, এমনিতেই পরীক্ষা কয়েক দফা পেছানো হয়েছে। তারপর বহু প্রতীক্ষিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ২২ মার্চ। সেই পরীক্ষায়ও হয়েছে নানা অনিয়ম। পরীক্ষার হলে কেউ কেউ মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি হল পরিদর্শকদের জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনটি কক্ষে মেডিক্যাল অফিসারদের প্রশ্নপত্রে ডেন্টাল সার্জনদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষার ফল কবে প্রকাশ করা হবে সে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত না করলেও পরীক্ষায় কারা পাশ করেছে এবং কত নম্বর পেয়েছে, সেগুলো সবার মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে বিএসএমএমইউ ক্যাম্পাসজুড়ে।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি— বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদস্থ কয়েকজন ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করেছে যে, তারা সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ৯২। একই পশ্নে মেডিকেল অফিসার ও ডেন্টাল সার্জনদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু সে বিষয়েও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানা যায়নি।

শিক্ষার্থীরা আরো জানান, ২২ মার্চ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও ১৮ মার্চ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কক্ষে পশ্নপত্র খোলা হয়। অথচ এমন বিষয় সম্পূর্ণ অনৈতিক। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে জানানো হলে তিনি তদন্ত করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু তারপর আর কিছুই হয়নি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, এই অভিযোগ স্রেফ গুজব। এটি কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। হলে মোবাইল নিয়ে ঢুকেছে— এমন তিনটি মেয়েকে আমারা পরীক্ষার সময় চিহ্নিত করি। হলরুমে তাদের ওপর নজর রাখতে নির্দেশ দেই। তবে হলে ফোন ব্যবহার না করায় তাদের কিছু বলা হয়নি।

পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম হয়নি দাবি করে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই পরীক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়েছে। ভেরিফিকেশনের জন্য যাদের সরকারের বিশেষ কর্তৃপক্ষ ফোন করছে তারা হয়তো মনে করছে যে, চাকরি হয়ে গেছে। কিন্তু এমনটি নাও হতে পারে। শিগগিরই হয়তো পরীক্ষার ফল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিএসএমএমইউতে ২শ’ চিকিৎসক নিয়োগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ওই সময় অজ্ঞাত কারণে পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা স্থগিত করাকে কেন্দ্র করে সেই সময় চাকরিপ্রার্থী চিকিৎসকরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন এবং ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত তিন উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরসহ পদস্থ কর্মকর্তাদের অবরোধ করে রাখেন। এরপর প্রশাসন থেকে জানানো হয়, নভেম্বরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পরীক্ষা গ্রহণের ভেন্যু না পাওয়ায় সেই পরীক্ষা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) অনুষ্ঠিত হয় গত ২২ মার্চ। ২শ’ পদের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৮ হাজার ৫৫১ জন চিকিৎসক। অর্থাৎ এক পদের বিপরীতে লড়েছেন ৪৩ জন।

(ওএস/এএস/এপ্রিল ০৯, ২০১৯)