প্রবীর সিকদার


লম্পট মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আইনি সহায়তা করায় কাজিরবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট বুলবুল ইসলাম সোহাগকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে ফেনী জেলা আওয়ামীলীগ! এই বহিষ্কার সমর্থনযোগ্য নয়। অপরাধী যতো বড় জঘন্য অপরাধই করে থাকুক না কেন, তিনি আইনগত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন না। আমি এই বহিষ্কারকে ব্যক্তি বিশেষের ইচ্ছার প্রতিফলন বলেই মনে করছি, সেই সঙ্গে বহিষ্কারের বিষয়টিকে আই-ওয়াশ বলেই বিবেচনা করছি।

এডভোকেট বুলবুল ইসলাম সোহাগ অর্থের বিনিময়ে লম্পট মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে আইনি লড়াই করছেন; আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার যেমন রয়েছে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার, তেমনি তাকে আইনি সহায়তা দেওয়ার অধিকার রয়েছে এডভোকেট সোহাগের। এই প্রক্রিয়ায় যিনি বাধা হবেন, তিনিই বেআইনি কাজ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যক্তি বিশেষের এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এডভোকেট বুলবুল ইসলাম সোহাগকে দল থেকে বহিষ্কার করে ফেনী জেলা আওয়ামীলীগ গুরুতর অন্যায় কাজ করেছে।

আমি যদি এডভোকেট সোহাগকে আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি এড়িয়েও যাই, সেক্ষেত্রেও অন্তত একটি নৈতিক বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এডভোকেট বুলবুল ইসলাম সোহাগ শুধু অর্থের বিনিময়ে লম্পট মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আইনি সহযোগিতা দিয়েছেন! কিন্তু যারা লম্পট মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার মুক্তি আন্দোলনে মদদ দিয়েছেন, লম্পট সিরাজউদ্দৌলাকে ধোয়া তুলসী পাতা সাজিয়েছেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে নুসরাত ও তার পরিবারকে যৌন হয়রানির মামলা প্রত্যাহারের অন্যায় চাপ দিয়েছেন, নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার আয়োজন করেছেন, আগুনে পুড়িয়ে হত্যার পর আত্মহত্যার গল্প বানিয়েছেন, সেই সব দুর্বৃত্তের পালের গোদা তো সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের বহুল বিতর্কিত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন! তার বিরুদ্ধে ফেনী জেলা আওয়ামীলীগ কেন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি? যতো দোষ বুঝি ওই এডভোকেট বুলবুল ইসলাম সোহাগ করেছেন! এই সব প্রশ্নের যিনিই খুঁজতে যাবেন, তার কাছে স্পষ্ট ধরা পড়বে, ব্যক্তি বিশেষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার দাস হয়ে গেছে ফেনী জেলা আওয়ামীলীগ!

শুধু কি ব্যক্তি বিশেষের ইচ্ছা অনিচ্ছার দাস! ঘটনা তো আরও জঘন্য, আরও বেদনার! নুসরাতের মায়ের যন্ত্রনাদগ্ধ আবেদন ছিল, লম্পট মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার মুক্তির দাবিতে যারা মানববন্ধন-সমাবেশ করেছেন, তাদের কেউ যেন নুসরাতের নামাজে জানাজা ও দাফনে অংশ না নেন। নুসরাতের মায়ের সেই আবেদনের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছেন সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন! পুলিশ সূত্র দাবি করেছিল, রুহুল আমিন তাদের নজরদারিতে রয়েছেন! কিন্তু আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সেই রুহুল আমিন বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার পরিবেষ্টিত হয়ে শ্লোগান-মিছিল নিয়ে এসে সদম্ভে নুসরাতের নামাজে জানাজার প্রথম কাতার দখল করে নিয়েছেন! এই ঘটনার পর ফেনীর মানুষ আর কি করবেন, কি বলবেন! তারা যা বোঝার বুঝে নিয়েছেন; বলীর পাঁঠা হবেন এডভোকেট বুলবুল ইসলাম সোহাগ, আর জঘন্য অপরাধ করে বেহায়ার মতো ক্ষমতা প্রদর্শন করবেন রুহুল আমিন! কেননা ফেনীতে তো আর কেউ প্রতিবাদ করতে পারেন না! ব্যক্তি বিশেষের খামখেয়ালিপনার কাছে জিম্মি ফেনীর আওয়ামীলীগ, প্রশাসন-পুলিশ তথা সারা ফেনী!