প্রবাস ডেস্ক : বাংলাদেশে যেভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে সেভাবে রফতানি হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশের বিদ্যমান অবকাঠামোতেই দুই-তৃতীয়াংশ রপ্তানি বৃদ্ধি সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যান্স টিমার।

বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) বসন্তকালীন বৈঠকে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনায় মিলিত হন হ্যান্স টিমার। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

তবে তিনি রফতানিখাতকে বেশি গুরুত্ব দেন। তার মতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিকে দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখতে হলে রপ্তানির বৃদ্ধির প্রতি জোর দিতে হবে। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজারে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে। বাণিজ্য ঘাটতি বাড়বে, মুদ্রার মান কমে যাবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ফলে প্রবৃদ্ধিকে টেকসইভাবে ধরে রাখা কঠিন হবে।

প্রবৃদ্ধি হার নিয়ে বিভিন্ন বিতর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, অনুমান সবসময় মিলবে এমনটি নয়। প্রবৃদ্ধি ৮ না ৭ শতাংশ হলো সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো এই প্রবৃদ্ধি কীভাবে অর্জন হচ্ছে। কেননা, ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও প্রবৃদ্ধি বাড়ে। কিন্তু বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ভোগ নির্ভর অর্থনীতির বাইরে উৎপাদনমুখী বাজার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি টেকসই উপায়ে ধরে রাখতে হবে।

দেশের রফতানি বাড়াতে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বাণিজ্য উদারীকরণ, বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার প্রবর্তন, বাণিজ্যের কর হার কমিয়ে আনতে হবে। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় আমদানিযোগ্য পণ্যে কর তুলনামূলক বেশি। এই হার কমিয়ে আনলে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন খরচ কমে আসবে। পাশাপাশি রপ্তানি কর কমিয়ে আনলে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে উৎসাহ পাবেন।

ব্রেক্সিট ও চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের মতো আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশের কিছু সুবিধা পেলেও দীর্ঘমেয়াদে এই ধরনের আন্তর্জাতিক সমস্যায় শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্বল্পমেয়াদে উন্নত দেশগুলো বিকল্প বাজার হিসেবে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রতি ঝুঁকলেও দীর্ঘমেয়াদে তারা নিজেদের দেশেই বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। ফলে রপ্তানির সুবিধা সেসময় আরো কঠিন হতে পারে।

উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর বাংলাদেশের বাণিজ্যে কী প্রভাব পড়বে সে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন বাণিজ্যিক জোটে এসুবিধা বহাল রাখার জন্য চেষ্টা চালাতে হবে।

বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সুপারিশ করে বলেন, ভর্তুকি নির্ভরতার দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। বিনিয়োগকারীদের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। নতুন বাজার তৈরি করতে হবে।

ব্যাংকিংখাত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। এটা বেশি হলে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে।

প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন নিয়ে মতভেদ থাকে? এমন প্রশ্নের জবাবে টিমার বলেন, বাংলাদেশ সরকার সবখাতের তথ্য নিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রাক্কলন করে। তবে বিশ্বব্যাংক মাত্র কয়েকটি খাত নিয়ে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করে। সেই হিসেবে বলা যায়, বিশ্বব্যাংকের চেয়ে সরকারের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন তথ্য আরো শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য।

(ওএস/এএস/এপ্রিল ১২, ২০১৯)