মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম সুবিদখালী গ্রামে ৫ একর জমিতে প্রথম বারের মতো রসালো ফল তরমুজের চাষে কৃষক মোঃ ইউসুফ আলী হাওলাদার সাফল্য লাভ করেছেন।

চাষের শুরুতে প্রথম দফায় বৃষ্টির কারনে হেঁচাট খেয়েও দ্বিতীয় দফায় তরমুজ চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়েছেন। তবে এ এলাকার মাটি তরমুজ চাষে উপযোগী না হওয়ার পরেও ইউসুফের তরমুজ চাষের সাফল্যে দেখতে প্রতিদিনই মানুষ ভীর করছেন তাঁর তরমুজ ক্ষেতে। এ সাফল্য দেখে স্থানীয় কৃষকরাও আগামীতে বেশি জমিতে তরমুজ চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

কৃষক মোঃ ইউসুফ আলী হাওলাদার বলেন, সংসারের অভাব-অনাটনের কারনে মির্জাগঞ্জ থেকে কাজের সন্ধানে পটুয়াখালীর জেলার গলাচিপা উপজেলায় গিয়ে প্রথমে ক্ষেতে-খামারে কাজ শুরু করি। অনেক বছর ওখানে থাকার পরে ওই এলাকার বাসিন্ধা মোঃ অলি আহম্মেদ সরদারের কথা মতে এবারে মির্জাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম সুবিদখালী গ্রামের নিজ এলাকায় ২ একর জমিতে তরমুজ চাষ শুরু করি। বৃষ্টির কারনে নিম্ন ভূমির ক্ষেত জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় ক্ষেতের গাছ গুলো মড়ে যায়। এতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

তবে বৃষ্টি শেষ হওয়ার পরে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। জলাবদ্ধতা থেকে ক্ষেত রক্ষা করতে দিন-রাত পরিশ্রম করে পরিচর্যার মাধ্যমে ভালো ফলনের উপযোগী করে তোলেন। এর কয়েকদিন পরে আরো ৩ একর জমি নিয়ে মোট ৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করি। জমিচাষ-সার-কীটনাষক-শ্রমিক মজুরিসহ সব মিলিয়ে প্রায় দুই লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। তবে ক্ষেতের সব তরমুজ বিক্রি করা হলে তিন লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তরমুজ চাষের কারনে এলাকার ২৫ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থানও হয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো থাকায় ট্রাকে করে তরমুজ উপজেলাসহ বরিশাল ও খুলাতে পাইকারি দেয়া হচ্ছে। সরকারি ভাবে আমাকে সহায়তা বা ঋন দেয়া হলে আগামীতে অধিক জমিতে তরমুজ চাষ করতে সক্ষম হবো।

তিনি আরো জানান, অসময় বৃষ্টি না হলে এ বছর তরমুজের ফলন খুব ভালো হতো। বাজারে তরমুজরে ভালো দাম থাকায় লাভের অংশ বেশি থাকত। তবে যা ক্ষতি হয়েছে তাতে দাম এভাবে ভালো থাকলে তা দিয়েও লোকসান কাটিয়ে উঠে লাভের মুখ দেখতে পারবো।

কৃষক অলি আহম্মেদ সরদার বলেন, গলাচিপা উপজেলার সর্বত্রই তরমুজ চাষ হয়ে থাকে। সেই কথা মাথায় চিন্তা করে মির্জাগঞ্জের ইউসুফ আলীর বাড়িতে বেড়াতে আসলে অনেক বছর আগে থেকেই তাকে বলতে থাকি যে,আমন চাষাবাষের পর তাঁর জমিগুলোতে তরমুজ চাষ করার জন্য। সে এবারে আমার কথা মতো গলাচিপা থেকে তরমুজের বীজ এনে ৫ একর তরমুজ চাষ শুরু করি। প্রথম হিসেবে এতে ব্যয় হয়েছে অনেক টাকা। ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। বৃষ্টির কারনে প্রায় দুই একর তরমুজ ক্ষেতে পানি জমিয়ে যায়। জমে যাওয়া পানির কারনে গাছের গোঁড়াগুলো রোদের তাপে অনেক গাছ মরে যায়। তার পরেও ক্ষেতে যে পরিমাণ তরমুজ আছে দাম ভালো পেয়েছি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মির্জাগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার পশ্চিম সুবিদখালী গ্রামেই ৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন ইউসুফ আলী হাওলাদার।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী মাটি হচ্ছে বেলে ও দোঁ-আশ মাটি। তবে মির্জাগঞ্জের সব স্থানে এঁটেল মাটি রয়েছে। এতে পানি শুষে নিতে পারে না। তাই ভিজে মাটিতে তরমুজের গাছগুলো মারা যায়। তবে যেসব স্থানে উঁচু জমি রয়েছে, সে জমিতে তরমুজ চাষ করা সম্ভব। এটেঁল মাটির কারনে খাটা-খাটুনি ও সারের পরিমানও বেশি লাগে। বৃষ্টিতে তরমুজের কিছুটা ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে যে গাছগুলো ছিল এবং নতুন রোপনকৃত গাছগুলোতে অধিক ফলন হয়েছে।

(ইউজি/এসপি/এপ্রিল ১৩, ২০১৯)