টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলে নিজ পেশায় টিকতে না পেরে বিভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে বাঁশ ও বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িত অসংখ্য কারিগর। পুঁজির স্বল্পতা, বাঁশ ও বেতের উৎপাদন হ্রাস, আর্থিক অসচ্ছলতা, উপকরনের অভাবেই আজ বিলুপ্তির পথে ঐহিত্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প।

টাঙ্গাইলের প্রায় সকল এলাকাতেই কমবেশি বাঁশ বেতের বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতো। বর্তমানে কোন কোন এলাকার স্বল্প সংখ্যক পরিবার তাদের পৈত্রিক পেশার হাল ধরে আছে। যদিও তাদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। বাকিরা টিকে থাকতে না পেরে দিন মজুরি, রিকশা, ভ্যান চালনায় ও অন্যান্য ক্ষুদ্র ব্যবসায় অবস্থান নিয়েছে।

টাঙ্গাইলের গালাবাজার এলাকার রহমত আলী জানান, তিনি কয়েক বছর হলো পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন দিন মজুরি করছেন। বাঁশ বেত এর তৈরী জিনিসের জন্য টাকা খাটিয়ে করে খুব একটা লাভ হতো না। এখন গতর খেটে কাজ করি, দিন শেষে দুইশত থেকে তিনশত টাকা রোজগার হয়। পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে পড়ে কোন রকমে বেঁচে আছি। তবে যেদিন কাজ না থাকে সেদিন অনেক কষ্ট হয়। তবে আগের চেয়ে অনেক ভাল আছি।

ঘারিন্দা এলাকার আক্কাস মিয়া জানান, বসত ভিটা বিক্রি করে কিছু টাকা পেয়েছি, তা দিয়ে একটি রিকশা কিনেছি। এখন রিকশা চালিয়েই সংসার চালাই।

স্মৃতিচারণ করে কালিহাতীর ৬৫ বছর বয়সী কারিগর নগেন বসু ও তার স্ত্রী স্বরস্বতী জানান, আগে সুন্দর সুন্দর জিনিস তৈরি করে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করতাম। ছেলে মেয়েরাও আমাদের সঙ্গে কাজ করতো। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। দুই ছেলে বাঁশ ও বেতের তৈরি কুলা, চাটাই , হাঁস মুরগীর খাঁচা, ঘাড়া, বেতের চেয়ার, ধামা, চালুনি, ঢুলি, খলাই, বুরং, হাত পাখা এসব জিনিস বানাতো। লাভ না হওয়ায় এখন বাড়ির সামনে মুদি দোকানের ব্যবসা করছি।

বাঁশ বেত শিল্পের বিলুপ্তির কারণ হিসেবে অনেকে ধারনা করেন, বর্তমানে বাঁশ ও বেতের চাষ না হওয়াতে ও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে এই শিল্পটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তবে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতাই ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পারে বলে মনে করেন বাঁশ ও বেতশিল্পের সঙ্গে কারিগররা ও সৌখিন লোকজন। বিভিন্ন এনজিও সংস্থা তাদের বাঁচানোর জন্য ঋণ কর্মসূচি দিয়ে সহযোগিতা করলেও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এ শিল্পটি বিলীন হয়ে যাবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন জীবনের তাগিদে পেশা বদল করে ভিন্ন পেশায় চলে আসা লোকজন। তাদের দাবি, বাঙ্গালীর ঐতিহ্য, সংস্কৃতির লালন ও সংরক্ষণে সরকার যদি এখনও একটু সহযোগিতা করত, তাহলে কষ্ট করে হলেও এ শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখা যেত।

(আরকেএম/এইচআর/এপ্রিল ১৬, ২০১৪)