সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : কর্মদিবসে সময় ও নিয়মিত অফিসে না এসে দায়িত্ব পালন না করে রোগীদেরকে স্বাস্থ্য সেবা না দেয়া সহ নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ তুললেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে উপজেলা স্বাস্থ্য কমিটির প্রথম সভায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের অনিয়ম দূর্নীতির বর্ণনা দেন তিনি। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন নেত্রকোনা-৩ আসনের এম.পি অসীম কুমার উকিল।

কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও নব নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকার বিপুল পরিমান টাকা খরচ করছে কিন্তু চিকিৎসকরা তাদের মনগড়া দায়িত্ব পালন করছেন।

সভায় তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সেবা সপ্তাহ কর্মসূচি শুরু হলেও এ কর্মসূচি সম্পর্কে উপজেলা পরিষদকে জানানো হয়নি। তাছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জীনাত সাবাহ তার দায়িত্ব ও কর্তব্যে চরম অবহেলা করে যাচ্ছেন। মাসে ৩ থেকে ৪ দিন অফিস করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অন্য যেসব চিকিৎসক আছেন তারাও প্রাইভেট চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। হাসপাতালে রোগীরা এলে কোন প্রকার চিকিৎসা সেবা পাননা। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে দিনে ও রাতের বেলায় বসে মদ, জুয়ার আড্ডা। কোন চিকিৎসক না থাকায় উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র নিয়মিত দরজা জানালাও খোলা হয়না।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বেখৈরহাটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বর্ণনা দিয়ে বলেন, এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দিনের পর দিন মাসের পর মাস বন্ধ থাকে। অথচ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এমনকি অন্য কোন তদারকি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে একেবারেই নজর দিচ্ছেন না। তিনি স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি এমপি অসীম কুমার উকিলের মাধ্যমে এসব অনিয়ম দূর্নীতি দূরীকরনের জোর দাবী রাখেন। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউএনও আল-ইমরান রুহুল ইসলাম, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ বজলুর রহমান, অফিসার ইনচার্জ ইমারত হোসেন গাজী ও স্বাস্থ্য কমিটির সদস্য শহিদুল হক ফরিক বাচ্চু।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার বক্তব্যে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের অনিয়ম দূর্নীতি দূর করতে হবে এজন্যে সকলকে হতে হবে আন্তরিক। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আন্তরিক ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি দাবী করেন।

সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ বজলুর রহমান অভিযোগ তুলে বলেন, অনিয়ম অব্যবস্থাপনার কারণে কোন মুক্তিযোদ্ধা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসলে সঠিক চিকিৎসা সেবা পাননা। তিনি চিকিৎসকদের গাফিলতি দূর করার দাবী তুলেন।

সভার সভাপতি এম.পি অসীম কুমার উকিল বলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসূচির বিষয়ে কোন প্রকার অনিয়ম দূর্নীতি সহ্য করা হবে না। তিনি স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসূচির বিষয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা দিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে যাচ্ছেন। সরকারের সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নে কেউ অবহেলা করলে তা মেনে নেয়া যাবে না। কোন অযুহাত দেখিয়ে জনগণকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্জিত করা যাবেনা। আমাদের যা আছে তা দিয়েই জনগণকে ভালো সেবা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সভা শেষে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে ঘুরে দেখেন তিনি। অপারেশন থিয়েটারের কক্ষে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার মূলবান যন্ত্রপাতি অযত্ন অবহেলায় পরে থাকতে দেখেন। তাছাড়া ওই কক্ষে পাখি বাসা বাঁধায় বিস্ময় প্রকাশ করেন।

তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জীনাত সাবাহর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার স্বামী ঢাকা মেডিকেলে চাকরি করে সে জন্য আপনিও স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করেন, আপনার সন্তান আছে তাদেরকেও দেখেন। সংসার দেখাশোনা করতে হবে উন্নতি করতে হবে সবই ঠিক আছে তবে জনগণকে ফাঁকি দিয়ে নয়। জনগণের প্রাপ্য সেবা দিয়ে শেখ হাসিনার ইচ্ছা পূরণ করতে হবে। এম.পি অসীম কুমার উকিল হাসপাতালে আগত রোগীদের মাঝে ভালোমানের খাবার পরিবেশন এবং বিছানাপত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যপারে জোর নির্দেশ দেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জীনাত সাবাহ ওই সভায় তার দৈনতার কথা প্রকাশ করেন এবং ভালো ভাবে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেন।

(এসবি/এসপি/এপ্রিল ১৮, ২০১৯)