স্টাফ রিপোর্টার : ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে এ যাবৎ গ্রেফতার হয়েছে ১৩ জন বলে বাঙালীয়ানাকে নিশ্চিত করে পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন যে এই হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।

ডিআইজি মজুমদার বলেন যে এ মামলা ছাড়াও অন্যান্য মামলায় আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তবে নুসরাত হত্যায় তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে, থাকলে তাদেরকেও এই মামলায় অভিযুক্ত করা হবে।

সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে নুসরাত হত্যা মামলায় সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমীনের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিআইজি মজুমদার বলেন, এমন অনেকের নামই তদন্তে উঠে এসেছে। আটককৃতদের জবানবন্দি ও বিভিন্ন তথ্য যাচাই বাছাই করছি এখন, হত্যা মামলায় যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদেরই এ মামলায় অভিযুক্ত করে গ্রেফতারের আওতায় আনা হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, যারা এ হত্যায় সম্পৃক্ত সে যেই হোক না কেন তাদের গ্রেফতারের নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্টমন্ত্রী পরিষ্কার ভাবে আমাদের দিয়েছেন। আমরা সম্পূর্ণ ভারমুক্ত হয়েই কাজ করছি। তিনি জনগণকে পিবিআই এর উপর ভরসা রাখতে অনুরোধ করেন।

এদিকে ফেনী পিবিআই এর এএসপি কাজী মনিরুজ্জামান শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৯ অপরাহ্নে বাঙালীয়ানা প্রতিবেদককে জানান এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত পুলিশ ও পিবিআই কর্তৃক গ্রেফতারকৃত ১৭ জন – কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুকছুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের হোসেন, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, জান্নাতুল আফরোজ মনি, শরীফ ও হাফেজ আবদুল কাদের। এর মধ্যে চার জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং কয়েকজন রিমান্ডে আছে।

যৌন হয়রানির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা পূর্বেই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে।

উল্লেখ্য, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি যৌন হয়রানি করে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা। এ প্রেক্ষিতে নুসরাতের মা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তার মেয়ের শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন। পুলিশ এক পর্যায়ে সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে। এই মামলা তুলে নেওয়ার জন্যে চাপ দিতে থাকে রাফির পরিবারকে। মামলা তুলে না নেওয়ায় সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা তার অনুসারীদের দিয়ে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় বলে মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ।

শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৯, সকালে ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রে আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে যান নুসরাত। তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে বোরখা পরা চার নারী মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। তাতে রাজি না হওয়ায় ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ফেনী সদর হাসাপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাত বুধবার, ১০ এপ্রিল মৃত্যু বরণ করেন।

নুসরাত হত্যায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে প্রধান আসামী এবং আরও ৭ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে যার তদন্ত করছে পিবিআই।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১৯, ২০১৯)