কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : সকল প্রকার চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে হামলা মামলা ও পেশি শক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পেশাগত জীবনের ৩৫ বছরে পা রাখলেন সাহসী ও চারন সাংবাদিক সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা। কোন বাঁধাই তাঁকে তাঁর পেশাগত জীবনের সঠিক দায়িত্ব থেকে দমাতে পারেনি। সংবাদ পাগল ও আপোষহীন সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে তিনি অনন্য ভূমিকা রয়েছে জীবনের প্রথম থেকেই জন্মস্থান কেন্দুয়ায় তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে। তাঁর সাহসীকতা ও আপোষহীনতার কথা সমাজের সকল মহলের মানুষের মুখে মুখে প্রশংসা রয়েছে। 

নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার ১১ নং চিরাং ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী গোপালাশ্রম গ্রামের কুলিন হিন্দু পরিবারে তাঁর জন্ম। ১৯৬৩ সনে তার প্রকৃত জন্ম হলেও এস.এস.সির সনদপত্রে জন্ম তারিখ ১৯৬৮ সনে লিপিবদ্ধ হয়েছে। গোপালাশ্রম ও বড়তলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গগডা উচ্চ বিদ্যালয়, জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করলেও ১৯৮৪ সনে গন্ডা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি এস.এস.সি পাস করেন। পরে ১৯৮৬ সালে কেন্দুয়া কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ১৯৮৫ সন থেকে তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় চিঠিপত্র কলামে লেখালেখি শুরু করলেও ১৯৮৫ সনের ২০ এপ্রিল থেকে দৈনিক নব অভিযান পত্রিকায় তিনি কেন্দুয়া নেত্রকোনার প্রতিনিধি হিসেবে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত হন।

এর পর তিনি দৈনিক জাহান, দৈনিক বাংলার দর্পন, দৈনিক খবর, দৈনিক সমাচার, দৈনিক বাংলার বানী, দৈনিক আজকের কাগজ, দৈনিক যুগান্তর, সাপ্তাহিক রাজধানী বার্তা, দৈনিক আজকের স্মৃতি, দৈনিক সমকাল পত্রিকায় তিনি নিজস্ব প্রতিনিধি হিসেবে সততা নিষ্ঠা এবং সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক সমকাল ছাড়াও, দৈনিক বাংলার দর্পন, দৈনিক জাহান সহ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায়ও তিনি লেখালেখি করে যাচ্ছেন। তার পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে অনেক মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলার শিকার হতে হয়েছে। হয়েছে বেশ কয়েকবার হত্যার পরিকল্পনা। তিনি জানান, সকল বাঁধা উপেক্ষা করেই তিনি আগামীর সুন্দর প্রত্যাশায় দেশ ও জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করে তাঁর পেশাগত অবস্থান থেকে চুল পরিমান পিছপা হননি।

সত্য ও ন্যায়ের পথ ধরে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগামীর পথ চলাকে সাথী করে এগিয়ে চলছেন তিনি। তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে কেন্দুয়ার বিভিন্ন রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ, হাটবাজার উন্নয়ন সহ অনিয়ম দূর্নীতি প্রতিরোধের অনেক নজির রয়েছে। সাংগঠনিক জীবনে ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে তিনি একজন সফল ব্যক্তিত্ব। তিনি কেন্দুয়ার ঐতিহ্যবাহী ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

এছাড়া কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের প্রথম বার সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে প্রেসক্লাবের নামে ৪ শতাংশ নিজস্ব ভূমি ক্রয় করেন। সে সময় প্রেসক্লাব সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বর্তমান নেত্রকোনা জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট আব্দুল কাদির ভূঞা। ওই সময়ে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আকরাম হোসেন বর্তমানে যিনি দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রান মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্বে আছেন, তার পৃষ্টপোষকতায় ও সদ্য বিদায়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ দেলোয়ার হোসেন ভূঞা এবং কেন্দুয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস.এম রুস্তমআলী সিকদার সহ অন্যান্য সুধিজনের অকৃপন সহযোগিতায় প্রেসক্লাব নিয়ে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছেচেন। দ্বিতীয়বার সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে প্রেসক্লাবের নিজস্ব ভবন তৈরির কাজ সম্পন্ন করেন।

এসময় প্রেসক্লাব সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রাক্তন গণপরিষদ সদস্য হাদিস উদ্দিন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র আলমগীর চৌধুরী। প্রেসক্লাব ভবন নির্মানের প্রথম অর্ধলক্ষ টাকা প্রদান করেছিলেন তৎকালীন নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মোফাজ্জল হোসেন। বর্তমানে যিনি রেল মন্ত্রনালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। তৃতীয় বার সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে প্রেসক্লাবের আভ্যন্তরিন রাস্তা ও বারান্দার ছাঁদ নির্মাণ সহ প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকার উন্নয়ন কাজে হাত দেন। এসময় প্রেসক্লাব সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের আরেক সংগঠক ডা. সৈয়দ আব্দুল খালেকের জ্যেষ্ঠ পুত্র সৈয়দ আব্দুল ওয়াহাব।

প্রেসক্লাব উন্নয়নে সে সময় আর্থিক বরাদ্দ প্রদানে অবদান রাখেন ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু এম.পি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ দেলোয়ার হোসেন ভূঞা ও সার্বিক পৃষ্টপোষকতা করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুতাসিমুল ইসলাম। তিনি জানান, তিন বার সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন কালে সফল অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তার অনুজ সাংবাদিক মোঃ রফিকুল ইসলাম। এছাড়া অধিকাংশ সদস্যই আন্তরিক সহযোগিতা করলেও কতিপয় সদস্য তার পেশাগত সুন্দর জীবনে নানা ভাবে কালিমা লেপনের চেষ্টায় আজও লিপ্ত রয়েছেন। সাংগঠনিক এসব কাজের বাইরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও রয়েছে তার অনেক বিচরণ।

তিনি ৫০টিরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশ সহ তবলা, মঞ্জুরী এবং কীর্তন গানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছেন। ১৯৮৮ সালে তিনি গৌরিপুর কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষা দিয়ে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হন। ১৯৮৭ সালে তিনি কেন্দুয়া জাতীয় তরুণ সংঘ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে সহকারী কো-অর্ডিনেটর হিসেবে এবং জাতীয় তরুণ সংঘের নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধিরও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রত্যাশা সাহিত্য গোষ্ঠি, মহুয়া খেলাঘর আসরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে বিশেষ অবদান রাখেন।

তাঁর সম্পাদনায় দূর্জয়, এইত সময়, শেকড় সন্ধানে, ইদানিং কথা সহ বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ হয়। তিনি বিভিন্ন দিবসে প্রবন্ধ / নিবন্ধন লিখা সহ কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯৯৪ সালে একই উপজেলার একই ইউনিয়নের সাজিউড়া গ্রামের প্রখ্যাত নাট্যশিল্পী সুশিল বিশ্বাসের প্রথমা কণ্যা (কৃষ্ণা কাবেরি) অপু রাণী বিশ্বাসের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তিনি ৩ সন্তানের জনক। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হৃদয় কিশোর সৌরভ জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করে বর্তমানে দেশের সুনাম খ্যাত জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। বড় কণ্যা শতাব্দী শর্মা জয়হরি স্পাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পরিক্ষা দিয়েছে। ছোট কণ্যা প্রিয়াংকা শর্মা তুলি জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত।

সাংগঠনিক ভাবে আদর্শীক অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি কেন্দুয়া প্রেসক্লাব থেকে অব্যহতির আবেদন দিয়ে কেন্দুয়া উপজেলা প্রেসক্লাব নামে একটি নতুন সংগঠনের জন্ম দিয়েছেন। এই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে যথেষ্ঠ সুনাম অর্জন করেছেন। প্রায় দুই বছর সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ শির্ষক বক্তৃতা ও রচনা প্রতিযোগিতা স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বিতরণ করেছেন। এছাড়া সংগঠনের প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে “চাই মাদক মুক্ত সবুজ সুন্দর বাংলাদেশ” শিরোনামে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫ হাজার গাছের চারা বিতরণ সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গাছের চারা রোপন করেন।

এছাড়া চিরঞ্জিব মুজিব ও আজকের বাংলাদেশ শির্ষক আলোচনা সভায় কারাগারে রোজ নামছা ও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন। সংগঠনের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে “চেতনা” নামক প্রকাশিতব্য স্মরনীকায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরবেন বিভিন্ন গুণীজনেরা।

চারন সাংবাদিক সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা বলেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবনা, সত্য ও ন্যায়ের পথ ধরে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারন করে আগামীর পথ এগিয়ে চলব।

করি গুরু রবিন্দ্রনাথের ভাষায় তিনি বলেন, সত্য যে বড় কঠিন আমি কঠিনেরে ভালোবাসিলাম। তাঁর এই কঠিন পথ চলায় সকল সত্যের পূঁজারী ও সাহসী জন মানুষের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

(এ/এসপি/এপ্রিল ১৯, ২০১৯)