রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মেঘনা উপলকূলবর্তী অঞ্চলে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ ৫টি চর ও ৪টি ইউনিয়নে হাজার হাজার একর জমিতে সয়াবিনের চাষ হয়। জেলার ব্র্যান্ডিং পন্য সয়াবিনের এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

চর ইন্দুরিয়া, কানিবগা, জালিয়ারচর, চরঘাশিয়া, চর কাচিয়ার চরে এবং উত্তর চর আবাবিল, দক্ষিন চর আবাবিল, উত্তর চরবংশী ও দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়নে এবার সয়াবিনের প্রচুর ফলন হওয়ার কারনে এখানকার কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। হাজার হাজার একর জমিতে চাষ হওয়া সয়াবিনের সবুজ চারা যেন নতুন এক আবহের সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে এটি রায়পুর উপজেলার প্রধান অর্থকরি ফসল হিসেবে পরিচিত। ফলে এখানে সয়াবিনের চাষাবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রায়পুরে মোট ৭ হাজার ৩৭৯ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও আবাদ হয়েছে ৩০০ হেক্টর। প্রতিবছর এ উপজেলায় সয়াবিন মৌসুমে ৩৫০ কোটি টাকার সয়াবিন বেচাকেনা হয়। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের কারনে এর মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও জানা গেছে।

উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী মোঃ নূরনবী পন্ডিত ও রাশেদুল হায়দার রকি জানান, দেশের খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠান ও পোল্ট্রি খাদ্য প্রস্তুতকারী যেমন সিটিগ্রুপ, বিশ্বাস গ্রুপ, নারিশ, সিপি, এস.আলম ও আফতাব গ্রুপসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলো এ উপজেলা থেকে সয়াবিন সংগ্রহ করে থাকে। শতকরা ৭৫ ভাগ সয়াবিন এখানে উৎপাদিত হলেও সয়াবিনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেনি কোন শিল্প-কলকারখানা। সহজ শর্তে ব্যাংকের ঋণ ও সরকারি আনুকূল্য পেলে সয়াবিন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চেহারা বদলে দিতে পারে বলে জানান তারা।

কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস হলো সয়াবিন আবাদের উপযুক্ত সময়। সার ও কীটনাশক তেমন দিতে না হওয়ায় এবং আগাছা কম থাকায় এর উৎপাদন খরচও অনেক কম। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পাকা সয়াবিন ঘওে তুলতে পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন এখানকার ব্যবসায়ী, মজুর ও কৃষকরা।

উপজেলার কয়েকটি বাজারসহ হায়দরগঞ্জ বাজারে দেশের উৎপাদিত ৭৫ ভাগ সয়াবিন এখানে কেনাবেচা হয়। সয়াবিনকে কেন্দ্র করে হায়দরগঞ্জ বাজারে পাঁচটি চাতাল ও ৬০-৭০টি পাইকারী দোকান গড়ে উঠেছে। এছাড়া হাজীমারা, আখনবাজার, মোল্লারহাট ও খাসেরহাটে ২৫-৩০টি পাইকারী দোকানে সয়াবিন কেনাবেচা হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহম্মেদ সরকার বলেন, ‘এ উপজেলায় ব্যাপকহারে সয়াবিন উৎপাদিত হয়। আমরা সয়াবিন চাষীদের দোড়গোড়ায় গিয়ে বিভিন্নরকম পরামর্শ দিয়ে থাকি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার সয়াবিনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে সকলের কাছে সয়াবিন “দিন বদলের ফসল” হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

(পিকেআর/এসপি/এপ্রিল ২০, ২০১৯)