রংপুর প্রতিনিধি : ছবিটি দেখে মনে হতেই পারে যে, এটি বৈশাখী মেলার কোন স্টলের ছবি। কিন্তু না, আসলে তা নয়। বৈশাখের তীব্র গরম আর লোডশেডিং সামাল দিতে হাতপাখা’র কোন বিকল্প নেই। আর তাইতো হাত পাখায় ছেয়েছে এখন রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন ফুটপাত। বাঙালি সংস্কৃতিরও এক বড় অনুষজ্ঞ এই হাতপাখা। নগরীর কাচারি বাজার এলাকার সামন দিয়ে হেঁটে গেলেই প্রধান ডাকঘর এবং টিএন্ডটি অফিসের সামনের ফুটপাতে সাজানো বাহারি এই হাতপাখা যে কারোর চোখে পড়বে। আজকের এ বিজ্ঞানের যুগে বিদ্যুতের ফ্যান আবিস্কারেরও অনেক আগে  সেই আদিকাল থেকেই রয়েছে হাতপাখার ঐতিহ্য। 

সব পাখার যেমন বাহারি রং আর ডিজাইন, তেমনি বাহারি নামও আছে এ সবের । একেক নামীয় এসব মৌসুমী পাখাও আসছে দুর দূরান্তের বিভিন্ন জেলা থেকে। দোকানীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাঙালি সমাজে জামাই বরণ করতে রয়েছে এক বিশেষ ঐতিহ্য। এজন্য এক পাখার নাম রাখা হয়েছে ‘জামাই বরণ’ পাখা। এই পাখা আসছে নওগা ও বগুড়া থেকে। একেকটির দাম ৫০ থেকে ৬০টাকা। জামাই বরণের পাশাপাশি আবার ‘বউ দুলালী’ আসছে ময়মনসিংহ থেকে। এর একেকটির দাম চক্ষু চড়ক অবস্থা। ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে একেকটি।

নরসিংদী থেকে আসছে ‘করলার চাক’ নামীয় পাখা। এর দামও ৩০/ ৩৫ টাকা। গাইবান্ধার ‘শীতলপাটির পাখা’র একেকটির দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আর বগুড়া থেকে আসা ‘পকেট পাখা’র একেকটির দাম ২০/ ২৫ টাকা। আউলিয়াগঞ্জ থেকে আসছে ‘সুতার পাখা’। এর দাম ৩০/৪০ টাকা। নরসিংদী এবং ময়মনসিংহ থেকে আসছে ‘তালের পাখা’। দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ‘ধারার পাখা’ ‘বাঁশের পাখা’ আসছে রংপুরের গঙ্গাচড়া আর পীরগাছা থেকে। অবশ্য বর্তমান বাজারে তুলনামূলকভাবে এসবের দাম এখনও কিছুটা কম হলেও দাম বেড়ে যাবে আরেকটু গরম পড়লে।

নগরীর বিভিন্ ফুটপাতেই চোখে পড়ে বাহারি রং ডিজাইন আর বিভিন্ন নামের এসব পাখা। তবে কাচারি এলাকায় ফুটপাতে রয়েছে সুসজ্জিত এবং চোখে পড়ার মত নানা পাখা। তীব্র গরম আর বিদ্যুতের ভেলকি বাজিতে অতীষ্ট মানুষের কাছে চিরচেনা সেই পাখার যেন আজও কোন বিকল্প নেই।

গ্রীষ্মকালের চিরচেনা এই পাখা কিনতে আসা নগরীর চাউল আমোদ এলাকার এক গৃহিনী পুরবী সরকার জানালেন গরম থেকে রক্ষা পেতে হাতপাখার কোন বিকল্প নেই। তাইতো বলা হয়ে থাকে ‘সুখ শান্তি পদায়িনি ওগো মম পাখা, গ্রীষ্মের শুরুতেই পাই যেন দেখা’।

কাচারি এলাকার পাখা ব্যবসায়ী মাসুদ রানা, ইমরান, ইমন আলম জানালেন, এখন প্রতিদিন গড়ে অন্তত দু’ আড়াই’শ পাখা বিক্রি হয়। লাভও একেবারে মন্দ না।

(এম/এসপি/এপ্রিল ২০, ২০১৯)