বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের বগী ও দক্ষিণ সাউথখালী অংশে বলেশ্বর নদী শাসনের দাবিতে মানবন্ধন করেছে এলাকাবাসি। নদী শাসন আন্দোলন কমিটির ব্যনারে রবিবার সকালে গাবতলা আশার আলো মসজিদ থেকে বগীবন্দর পর্যন্ত আধা কিলোমিটার লম্বা মানববন্ধনটি মানবপ্রচীরে পরিনত হয়। প্রায় এক ঘন্টা ধরে চলা এ মানবপ্রাচীরে নদী ভাঙনের শিকার দুই গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ অংশ নেয়। পরে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাও মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। 

আন্দোলন কমিটির আহবায়ক নজরুল ইসলাম আকন ও সমন্বয়কারী ইউপি সদস্য মো. রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শরণখোলার ৩৫/১ পোল্ডারের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং ভাঙনকবলিত এলাকা হচ্ছে সাউথাখালী ইউনিয়নের বগী ও দক্ষিণ সাউথখালী অংশ। এখানকার প্রায় দুই কিলোমিটার বাঁধ প্রতিমুহূর্তে বলেশ্বর নদীতে বিলিন হচ্ছে। গত ১০ বছরে এ দুই গ্রামের হাজার হাজার ঘরবাড়ি, শত শত একর ফসলী জমি বলেশ্বর গ্রাস করেছে। দুটি গ্রামের প্রায় তিনভাগের দুইভাগই বলেশ্বর গিলে খেয়েছে।

গত ২২ মার্চ বগী বেড়িবাঁধের ১০০ মিটার ভেঙে একমাস ধরে জোয়ারের পানি ঢুকে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। শত শত পরিবার মানবেতর জীবনযাপর করছে। কিন্তু ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের এপর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমন ভয়াবহ ভাঙনের মুখে নদী শাসন না করেই বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) মাধ্যমে বেড়িবাঁধ নির্মানের পাঁয়তারা চলছে।

একদিকে নদী ভাঙছে, আবার অন্যদিকে বার বার ফসলী জমি অধিগ্রহন করে প্রহসেনর বাাঁধ নির্মান করা হচ্ছে। যার ফলে, বছর বছর বাঁধ বিলিন হয়ে সরকারকে কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে এবং নিঃশ্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় নদী শাসন না করে এখানে বাঁধ নির্মানের চেষ্টা করলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী তা কোনোভাবেই মেনে নেবেনা। বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করা হবে।কর্মসূচী শেষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এক স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করি ঘূণিঝড় সিডরে উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলা ল-ভ- হয়ে যায়। ওই ঝড়ে বলেশ্বর নদের তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই থেকে এলাকাবাসী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ‘বাপাউবো’র উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান কাজ শুরু হয়।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে চায়নার ‘সিএইচডব্লিউই’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মান কাজ বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু নদী শাসন না করেই মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করায় বাঁধের স্থায়ীত্ব নিয়ে শুরু থেকেই এলাকাবাসী প্রশ্ন তোলেন।

(এসএকে/এসপি/এপ্রিল ২১, ২০১৯)