শরীয়তপুর প্রতিনিধি : দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরে এক বাংলাদেশী যুকবকে গুলি করে হত্যা করেছে কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার রাত ১২দিকে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত যুবকের নাম পারভেজ সরদার। তিনি শরীয়তপুর সদর উপজেলার মাহমুদপুর দক্ষিন পাড়া গ্রামের দেলোয়ার সরদারের পূত্র। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পারভেজ জীবীকার তাগিদে আফ্রিকা গিয়েছিলেন।

নিহত পারভেজের চাচাতো ভাই রিজভী হাসান জানান, বাড়িতে পারভেজের মা-বাবা, স্ত্রী ও লামিয়া নামের মাত্র ২ বছর বয়সের একজন কন্যা সন্তান রয়েছে। পান্নু নামের পাভেজের আরেজন ভাই রয়েছে। বাড়ির একমাত্র উপার্জণক্ষম লোকটিকে হারিয়ে পরিবারের সবাই এখন শোকে স্তব্ধ। তাদের বাড়িতে স্বজনদের মাঝে চলছে আহাজারি-শোকের মাতম। পারভেজের মৃত্যু সংবাদ বাড়িতে পৌছার পর মা পারভীন বেগম এবং স্ত্রী রহিমা বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। অজ্ঞান হয়ে পরে আছেন বাবা দেলোয়ার সরদার।

পারিবারিক সূত্রে আরো জানা গেছে, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ৬ লাখ টাকা ব্যয় করে পারভেজ গত বছর ২১ ফেব্রুয়ারী পারভেজ বাংলাদেশ থেকে দক্ষিন আফ্রিকা যান। সেখানে কেপকাউনে নিকটাত্মীয় জহিরুল ইসলামের দোকানে চাকুরী নেন পারভেজ। চলতি বছরের ২ মার্চ জহিরুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করে কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীরা। এরপর পারভেজ সেখান থেকে অপর আত্মীয় বাবুর দোকানে চাকুরী গ্রহন করে চলতি মাসে। কিন্তু পারভেজ সেখানে গিয়েও বাঁচতে পারলোনা। শুক্রবার রাতে জহিরকে হত্যার মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে পারভেজকেও হত্যা করা হলো।

পারভেজের স্ত্রী রহিমা আক্তার কান্না জরিত কন্ঠে বলেন, ২০১৪ সালে আমাদের বিয়ে হয়েছে। ১৭ সালে আমাদের কোল জুড়ে আল্লাহ একটি কন্যা সন্তান দিয়েছেন। আমার মেয়েটিকে মাত্র ৯ মাসের রেখে ওর বাবা আফ্রিকা চলে যায়। শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় মারা যাওয়ার ৮ ঘন্টা আগে আমার ও আমার মেয়ে লামিয়ার সাথে পারভেজের শেষ কথা হয়। আমার মেয়েকে ওর বাব কথা দিয়েছিল, মানুষের ঋণ পরিশোধ শেষ করে আগামী ঈদে বাড়ি এসে একসাথে মেয়ের সাথে ঈদ করবে। আমাদের সে স্বপ্ন পূরণ হলোনা। সন্ত্রাসীদের গুলিতে আমার স্বামী নিহত হলো। আমার দুই বছরের লামিয়া এতিম হয়ে গেল। আমি এখন কিভাবে বাঁচবো। আমার মেয়েটা কাকে বাবা বলে ডাকবে। আমি আমার স্বামীকে শেষ বারের মত দেখতে চাই। সরকার যেন আমার স্বামীর লাশটি দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেন।

(কেএনআই/এসপি/এপ্রিল ২১, ২০১৯)