স্টাফ রিপোর্টার : ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ বলেছেন, কক্সবাজারের রামু জনপদে হাজার বছর ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও মুসলমানরা যেভাবে একসঙ্গে বসবাস করছে, তা শুধু বাংলাদেশ নয় বরং বিশ্বের জন্য আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বাস্তব ছবি রামু জনপদ।

রবিবার (২১ এপ্রিল) বেলা ১১টায় রামু উপজেলার রাংকুট জগৎ জ্যোতি শিশু সদন প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সর্বধর্মীয় মিলনমেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে ঐতিহাসিক রাংকুট বৌদ্ধ বিহার, রাংকুট জগৎ জ্যোতি শিশু সদন এবং শ্রীশ্রী রামকুট তীর্থধাম পরিদর্শন করেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, রামু জনপদে একদিকে যেমন ২৬৮ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে সম্রাট অশোক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক রাংকুট বনাশ্রম মহাতীর্থ মহাবিহার রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে হিন্দু ধর্মের শ্রীশ্রী রামকুট তীর্থধাম বা শ্রীশ্রী রামচন্দ্রের কুটির, যা খ্রিষ্টপূর্ব ২৮০০ অব্দে প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া রয়েছে শত বছরের মুসলিম ও খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন নিদর্শন। এ জনপদের সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জনগণের মধ্যকার পারস্পরিক সহযোগিতমূলক মনোভাব সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক, যা আমাকে দারুণভাবে মুগ্ধ করেছে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এ সময় রামুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য সংরক্ষণে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং সংস্কারে সরকার, বিশেষ করে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, সব সম্প্রদায়ের মধ্যেই কিছু দুষ্টু লোক থাকে, যারা হীন স্বার্থ চরিতার্থের জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করতে চায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সে সব দুষ্টু চক্রকে কঠোর হস্তে দমন করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

পবিত্র কোরআন, ত্রিপিটক, গিতা ও বাইবেল পাঠের মাধ্যমে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলা আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। সভা পরিচালনা করেন বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্তভুষন বড়ুয়া।

সভায় তিন পার্বত্য জেলার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জহির আহমেদ, ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট দীপংকর (পিন্টু), হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজার জেলা অঞ্চলের ট্রাস্টি প্রিয়োতোষ শর্মা চন্দন, প্যাগোডাভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্পের পরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব জয়দত্ত বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট রাশিদা পারভিন, অ্যাডভোকেট লিনাসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে রামু উপজেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ ফয়েজ, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষে রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ কে. শ্রী জ্যোতিসেন থেরো, হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষে রামপুর তীর্থ ধামের পরিচালনা কমিটির সদস্য সুশান্ত পাল বাচ্চু এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পক্ষে রাংকুট জগৎ জ্যোতি শিশু সদনের মহাপরিচালক রিতা মালেকা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। মিলনমেলায় রাংকুট জগৎ জ্যোতি শিশু সদনের শিক্ষার্থীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২২, ২০১৯)