রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার বনাঞ্চলে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে রোপনকৃত আমগাছের প্রায় সবকটি ডাল কেটে ন্যাড়া করে ফেলেছেন স্থানীয় বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

উপজেলার দোখলা রেঞ্জ অফিসের নিকটস্থ ভিআইপি রেষ্ট হাউজের উত্তর-পশ্চিম পাশে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত আমগাছটির ডালপালা কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন তারা। ডালপালা কাটার ফলে ঐতিহাসিক এ গাছটি এখন মৃতপ্রায়। স্থানীয়দের অভিযোগ দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মানিক মিয়া তার লোকজন দিয়ে গাছটির ডালপালা কেটে বিক্রি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত এ গাছটির ডাল কাটায় মধুপুরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, মধুপুরের অরণখোলা মৌজায় সংরক্ষিত বনভূমিতে ১৯৬২ সনে নির্মিত বন বিশ্রামাগারটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান এর পূণ্য স্মৃতিবহন করে আসছে। ১৯৭১ সনের ১৮ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ সর্বশেষ এ বন বিশ্রামাগারে অবস্থান করেছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধান রচনার সাথেও এই বনবিশ্রামাগারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে বন বিভাগের স্মৃতি ফলকে এখনও দৃশ্যমান।

এ বিষয়ে বিশ্রামাগারের পিছনে চুনিয়া গ্রামের ১১০ বছর বয়সের বৃদ্ধ গারো আদিবাসী জনিক নকরেক জানান, ১৯৭১ সনে বঙ্গবন্ধু এ বিশ্রামাগারে অবস্থানকালে এ আমগাছটি রোপন করেছিলেন। এ অঞ্চলের বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর প্রয়াত পরেশ চন্দ্র মৃ তার সঙ্গে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে একনজর দেখতে আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম। একই মন্তব্য করেন প্রয়াত পরেশ বাবুর ভাতিজা অজিত রুগা (৭০) এবং ভূটিয়া গ্রামের প্রকাশ চন্দ্র মৃ (৯৫)।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানায়, রেঞ্জার মুশফিকুর রহমানের বঙ্গবন্ধুর প্রতি কোন শ্রদ্ধা বা ভালবাসা নাই। তিনি অবশ্যই স্বাধীনতার পক্ষের লোক নন।

ওই অঞ্চলের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে রোপনকৃত আমগাছের ডাল কাটার মত এমন দুঃসাহস বন কর্মকর্তা পেলেন কোথা থেকে? এ ব্যাপারে শীঘ্রই স্থানীয় এম.পি কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাকের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান মানিক জানান, বন বিশ্রামাগারটি সংস্কার করা হবে। ওই স্থানে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্তম্ভ এবং ফুলের বাগান করা হবে। এই জন্য ডিএফও স্যার শ্রমিকদের গাছের ছোট ছোট ডাল ও পাতা কাটতে বলেছিলেন। কিন্তু ওইদিন আমি টাঙ্গাইলে থাকায় শ্রমিকরা কিছু কাঠের লোভে পড়ে বড় কয়েকটি ডাল কেটে ফেলেছে।

জেলা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ খান আমগাছের ডাল কাটার নির্দেশের কথা অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে খোঁজ খবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত নন। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।

(আরকেপি/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০১৯)