রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। দলীয় গ্রুপিং আর অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। সর্বনাশা গ্রুপিং রাজনীতির কারনে দলীয় কার্যক্রমে চরম স্থবিরতা বিরাজ করছে। সভা-সমাবেশ নেই বললেই চলে। এ কারনে হতাশ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মী সহ সমর্থকরা।

স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নেতৃত্ব সংকটের কারনে সর্বনাশা গ্রুপিং চাঙ্গা হয়ে হওয়ায় নেতা-কর্মীরা একদিকে যেমন হতাশ হয়ে পড়েছেন, ওপর দিকে এসব নেতা-কর্মীরা দল বিমূখ হয়ে পড়ছেন। সব কিছু মিলে, স্থবিরতা কুরে কুরে খাচ্ছে লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগকে।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, মুধমতি ও নবগঙ্গা বিধৌত লোহাগড়া উপজেলা বরাবরই আওয়ামী লীগ রাজনীতির অন্যতম পীঠস্থান। জাতীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে লোহাগড়ার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। এতো কিছুর পরেও নিরেট সত্য হলো, লোহাগড়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ‘নেতৃত্ব’ সংকটের কারণে সব সময় দলীয় গ্রুপিং মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তা ছাড়া, রয়েছে দলীয় কোন্দল। দলীয় কোন্দলের কারনে তৎকালীন যুবলীগ নেতা মোঃ খসরুল আলম মোল্যা ওরফে খসরু নৃশংসভাবে খুন হয়। গ্রুপিং আর কোন্দলে জর্জরিত লোহাগড়ার আওয়ামী লীগ। এখানে দলের কোন ‘চেইন অব কমান্ড’ নেই।

ফলে, নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত। আর এ সব বিভক্তির ঢেউ দলের অঙ্গ সংগঠনের মধ্যেও বিরাজমান। এক কথায়, সর্বনাশা গ্রুপিং আর অভ্যন্তরীন কোন্দলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চরম স্থবিরতা এবং হতাশা বিরাজ করছে। দলীয় রাজনীতির এহেন বেহাল দশার কারনে বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যক্রম থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছেন। এ সব নেতা কর্মীরা দিন দিন দল বিমূখ হয়ে পড়ছেন।

অনুসন্ধানকালে আরোও জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু সভাপতি ও সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পরেই সভাপতি ও সম্পাদক দলীয় কর্মকান্ড বাদ দিয়ে সর্বনাশা গ্রুপিং রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নেতা-কর্মীরাও প্রকাশ্য দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েন।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সম্মেলনের পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিকট কমিটি জমা দিবেন। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দ্বয়ের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা তো দুরের কথা, মুখ দেখা বন্ধ ছিল সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে। এ ভাবে দু’জনের নেতৃত্বে দীর্ঘ দিন গ্রুপিং করে দলীয় রাজনীতি চলার পর ২০১৮ সালে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ ৭১ সদস্য বিশিষ্ট লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন করেন। এ কমিটি অনুমোদনের পরই সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটুর নেতৃত্বাধীন অপর একটি কমিটি প্রকাশ করা হয়। যদিও এই কমিটির জেলা কমিটি কর্তৃক কোন অনুমোদন ছিল না। এ নিয়ে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. সুবাস বোস সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

লোহাগড়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গ্রুপিং সৃষ্টি হয় মূলতঃ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটুর অনৈতিক কর্মকান্ডকে কেন্দ্র করে। সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে দলের মধ্যে একটি সুবিধাবাদি মহল সৃষ্টি করে নানা সুবিধা নেওয়ায় দলের সাধারণ নেতা-কর্মীরা যারপরনাই ক্ষুদ্ধ হন। ক্ষুদ্ধ হন দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা।

তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের এ সব অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদে দলের সভাপতি শিকদার আব্দুল হান্নান রুনুর নেতৃত্বে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা একাট্টা হয় এবং লোহাগড়ায় দলীয় রাজনীতিতে ‘লিটু বিরোধী মোর্চা’ গড়ে তুলতে সক্ষম হন।

সর্বশেষ ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দু’জনই চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন এবং বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু আনারস প্রতিক নিয়ে বিজয় লাভ করেন। দলের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীর বিরুদ্ধে এ দু’জন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় দলীয় হাই কমান্ড কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। এ কারনে দলীয় নেতা-কর্মীরা চরম ক্ষুদ্ধ। পাশাপাশি দলীয় কোন্দল নিরসনে কোন বিধি ব্যবস্থা না থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন এ সব নেতা-কর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কর্মী জানান, দল এ ভাবে চলতে পারে না! সর্বনাশা গ্রুপিং আর দলীয় কোন্দলে দলের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে উপজেলা আওয়ামী লীগ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। অপর দিকে, বর্তমান মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি তথা নেতৃত্বের মাধ্যমে লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ চাঙ্গা হবে এমনটাই প্রত্যাশা দলের নেতাকর্মীদের।

(আরএম/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০১৯)