স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে ঝিমিয়ে পড়া উগ্রবাদীরা অনুপ্রাণিত হতে পারে। তবে বাংলাদেশে তাদের সুসংগঠিতভাবে কোনো ধরনের হামলার সক্ষমতা তাদের।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘মিট উইথ মনিরুল ইসলাম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)।

মনিরুল ইসলাম বলেন, এক দেশের ঘটনায় অন্য দেশের সন্ত্রাসীরা উৎসাহী হয় এবং অনুকরণ করার চেষ্টা করে। হলি আর্টিসানে হামলার পর ইন্দোনেশিয়ার একটি গোষ্ঠী উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের মধ্যে প্রচারণা চালিয়েছিল। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডে হামলার পর কিছু গোষ্ঠী তাদের নিজেদের চ্যানেলগুলোতে খ্রিস্টান বা ইহুদি বিরোধী প্রচারণায় তৎপর হতে দেখা গেছে। শ্রীলঙ্কায় হামলার ঘটনায়ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উগ্রবাদীদের অনুপ্রাণিত করতে পারে। দেশে কারো কারো মনে আসতে পারে- ‘আমরা কিছু করব’। কিন্তু বাংলাদেশে কারো পক্ষে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাংগঠনিক সক্ষমতা নেই। যারা আছে তারা বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

ভবিষ্যতেও যেন কোনো গোষ্ঠী প্রস্তুতি নিয়ে কোনো ধরনের নাশকতা চালাতে না পারে এমন তৎপরতার কথাও জানান তিনি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিসানে হামলার পর বিভিন্ন দেশ ভেবেছে আমরা ঠেকাতে পারব না। কিন্তু সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি এবং সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। তবে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।

সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদ যেহেতু একটা মতবাদ, তাই কেউ না কেউ এই মতাদর্শের থেকেই যায়। যারা এই মতবাদের তাদের অনেককেই ইতোমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া অনেকে নজরদারিতে রয়েছে।

শ্রীলঙ্কার হামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জাবাবে এই অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেন, শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গৃহযুদ্ধ ছিল। লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলমের (এলটিটিই) নামে একটি আত্মঘাতী বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ তৎপর ছিল সেখানে। গতবছর সর্বশেষ শ্রীলঙ্কায় যে দাঙ্গাটি হয়েছিল, সেটি বৌদ্ধ এবং মুসলমানদের মধ্যে। এছাড়া এলটিটিই কখনও কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীকে টার্গেট করে হামলা চালায়নি। তাদের টার্গেট গভর্নেন্স মেকানিজমে যারা রয়েছে তারা। কিন্তু শ্রীলঙ্কার গির্জা এবং হোটেলে যে হামলাটি হয়েছে, এটি নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসবাদ। নিউজিল্যান্ড হামলার পর পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার উগ্রবাদী সংগঠনগুলো খ্রিস্টানদের ওপর ক্ষিপ্ত হতে দেখা গেছে। শ্রীলঙ্কায় খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা হয়েছে, আর এটার ইমপ্যাক্ট বাড়ানোর জন্য হোটেলগুলোতে হামলা করা হয়েছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, হামলায় সাধারণত কোনো গোষ্ঠীর শীর্ষ পর্যায়ের কেউ অংশ নেয় না। কিন্তু এখানে তাওহিদ জামাতের শীর্ষ পর্যায়ের একজন সরাসরি হামলায় অংশ নিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং তিনি নিহত হয়েছেন।

মালদ্বীপ থেকে একটা বড় সংখ্যার লোকজন আইএস-এ যোগ দিয়েছে। মালদ্বীপের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার নৌপথে যোগাযোগ রয়েছে। এছাড়া, তাওহিদ জামাতের একটা অংশও আইএসের বায়াত নিয়েছিল। তবে হামলাকারীদের মধ্যে তাদের কেউ ছিল কি না এখনই তা বলা মুশকিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০১৯)