গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রাজা পেপার মিলের অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে ইছামতি গজারী খালে। এতে খালের পানি দূষিত হচ্ছে, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এ কারণে খালপাড়সহ ১০টি গ্রামের বাসিন্দাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুর্গন্ধে ২টি শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ মারাতœক হুমকির মুখে পড়েছে। কমতে শুরু করেছে ওই দুটি  প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।

এদিকে দূষণ থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরে কয়েক দফায় লিখিত অভিযোগ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে এলাকাবাসী। কিন্তু পরিস্থিতি সমাধানে আজও উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। তবে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামকৃষ্ণ বর্মণ।

সরেজমিনে দেখা গেছে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক ঘেঁষে গোবিন্দগঞ্জের চাঁপড়ীগঞ্জে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে রাজা পেপার মিলের এই কারখানা। গত দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠিত পেপার মিলটি উৎপাদন চালিয়ে আসছে।

অভিযোগ রয়েছে, কারখানার বর্জ্য পরিশোধন না করেই সরাসরি ফেলা হচ্ছে পাশের ইছামতিগজারী খালে। এই খালের পানি প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে মিশেছে করতোয়া নদীতে।

স্থানীয়রা জানান, করতোয়া নদীর একটি শাখা ইছামতিগজারীর এই খাল। দুই বছর আগেও খালের পানির সেচের ওপর নির্ভরশীল ছিল এলাকার কৃষকরা। মাছ ধরে অনেকে সংসার চালাতেন। এছাড়া খালে ধানের চারা রোপণ ও পাট পচানোসহ বিভিন্ন সুবিধা পেতো এলাকাবাসী। কিন্তু কারখানাটি প্রতিষ্ঠার পর কারখানা থেকে আসা বিষাক্ত বর্জ্যে এখন ভরাট হয়েছে খালটি। বৃষ্টির পানির সঙ্গে বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ায় আশপাশের কয়েক এলাকার পরিবেশ বিপযস্থ হয়ে পড়েছে।

এদিকে, মিল কারখানাটির কিছু দূরে চাঁপড়ীগঞ্জ বাজার। ৫০০ গজ দূরত্বে এসএম ফাজিল মাদ্রাসাসহ চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। খালের দূষিত বর্জ্যের ছড়ানো দুর্গন্ধে বাজারসহ স্কুলে যাতায়াতকারীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃষ্টি আর বর্ষা মৌসুমে আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকাবাসীকে।

চাপড়িগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নুরে দিবা শান্তি বলেন, বর্জ্যের দুর্গন্ধে পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। দুর্গন্ধে স্কুলে টেকাই যায় না। ¯কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দিন দিন কমতে শুরু করেছে।

শিক্ষার্থী শাকিল বলেন, খালের দুর্গন্ধে ক্লাস করতে সমস্যা হয়। স্কুলে যাতায়াত করতে হয় নাকে মুখে কাপড় অথবা রুমাল বাঁধিয়ে।

কামারদহ গ্রামের কৃষক হারুন মিয়া বলেন, বিলের দূষিত পানির কারণে দুই বছর ধরে আশপাশের জমিতে ফসলের ভালো ফলন হচ্ছে না। দূষিত পানি ছাড়াও কারখানার কালো ধোয়ায় ধান, পাট, কলা বাগান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। পরিস্থিতির সমাধান না হলে আগামীতে খালের পাশের জমিগুলোতে ফসল ফলানো সম্ভব হবে না।

স্থানীয় এলাকার সহকারী অধ্যাপক আবদুল জলিল বলেন, কারখানাটি চালুর পর বর্জ্য ও বিষাক্ত পানি খালে মিশে পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করেছে। বিপর্যয়ের মুখে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন খালের দুই ধারের জনবসতি এলাকাসহ আশপাশের দশ গ্রামের মানুষ।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাজা পেপার মিলে গেলেও সাংবাদিক পরিচয় জেনে তারা গেট বন্ধ করে দেয়। মোবাইলে কথা হলে রুবেল নামে এক কর্মচারী বলেন, এলাকায় প্রতিষ্ঠান থাকলে সামান্য সমস্যা মেনে নিতে হয় স্থানীয়দের।

এ নিয়ে পেপার মিলের মালিক রাজা মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামকৃষ্ণ বর্মণ বলেন, কারখানার বৈধতা ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে মালিককে নোটিশ করা হবে। এরপর কাগজপত্র যাচাইয়ের পর দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এসআরডি/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০১৯)