জকিগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি : জকিগঞ্জের ডিগ্রি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক ও সহকারি শিক্ষিকের মধ্যে গতকাল বুধবার বিদ্যালয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ দিয়ে দু’ পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। আহত প্রধান শিক্ষক খাদেজা বেগম চৌধুরী ও সহকারী শিক্ষক হাসনা বেগম হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ব্যাপারে সহকারি শিক্ষক হাসনা বেগম জকিগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অপর দিকে প্রধান শিক্ষক খাদেজা বেগমও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম, স্বেচ্চাচারিতা ও সহকারি শিক্ষকদের সাথে দুব্যবহারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষাকর্মকর্তা বীরেন্দ্র চন্দ্র দাস, ইউআরসি ইনট্রাক্টর মোহাম্মদ আবুল মাসুদ, এইউও জোবায়ের আহমদ গত ২৫ মার্চ ইউএনও বরাবরে এক প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এতে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সহকারি শিক্ষকদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ, হিন্দু শিক্ষককে মালাউনের বাচ্চা গালি দেয়া, সভাপতির ছেলে কর্তৃক সহকারি শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ, দপ্তরীর সাথে অশালীণ আচরণ, চাকুরী খেয়ে ফেলার হুমকি, ১৮ বছর একই স্কুলে অবস্থান, গ্রুপিং সৃষ্টি করা, সময় না মেনে বিদ্যালয়ে আগমন ও প্রস্থান, বিদ্যালয়ের পরিবেশ অশান্ত করা, বিদ্যালয়ের কোমলমতি ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী কর্তৃক বাজারের ব্যাগ বহন করাসহ ১০টি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন বলে উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।

বিদ্যালয়ের চেইন অব কমান্ড বলে কিছু নেই এবং সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধও নেই। শিক্ষার সুষ্টু পরিবেশ নিশ্চিত করণে প্রথমে প্রধান শিক্ষককে বদলি ও পরিস্থিতি বিবেচনায় সহকারী শিক্ষকদেরও বদলি করার সুপারিশ করেন।

এছাড়া গত ১৬ এপ্রিল এক শিক্ষার্থীকে চোর অপবাদ দিয়ে লাঞ্ছিত করায় শিক্ষার্থীর অভিভাবক সাখরপুর গ্রামের আব্দুল জব্বার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে আরেকটি লিখিত অভিযোগ করেন। উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষদের মধ্যে বিরোধ চরমে রূপ নেয়।

এ হাসনা বেগম বলেন, অফিস কক্ষে হাজিরা দিতে গেলে প্রধান শিক্ষক আমাকে এলোপাথারী মারপিট করেন। প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম বলেন, সহকারি শিক্ষক হাসনা বেগম গত ১৭ এপ্রিল আমাকে না জানিয়ে স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন এবং ২৩ এপ্রিল একই ভাবে আমাকে না জানিয়ে বিদ্যালয় ছুটির পূর্বেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। বুধবার অফিস কক্ষের টেবিল হতে আমার মোবাইলটি হাতে নিলে আমি এর কারণ জিজ্ঞাসা করিলে সহকারি শিক্ষক হাসনা বেগম আমাকে মারধর করেন।

এ ব্যাপারে জকিগঞ্জের ইউএনও বিজন কুমার সিংহ জানান, শিক্ষকদের এ ধরনের দ্বন্দ্ব অপ্রত্যাশিত। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে এর প্রভাব পড়বে। বিষয়টি তদন্ত করে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

(এসপি/এসপি/এপ্রিল ২৪, ২০১৯)